অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। এরই মাঝে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। হাজার হাজার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী (Bangladeshi Infiltrators) ধরা পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
ত্রিপুরা পুলিশের রিপোর্ট অনুসারে ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩,৫১৮ জন অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই খবরটি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যা বাংলা অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে আরও তীব্র করেছে। ত্রিপুরা সীমান্তের কাছাকাছি এই অভিযানগুলো শুরু হয়েছে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেখানে অবৈধ অভিবাসনকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ত্রিপুরা পুলিশের মতে, এই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। এই অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ সীমান্ত এলাকায় রাতের পাহারা বাড়িয়ে সন্দেহজনক কার্যকলাপের উপর নজর রাখছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, এই অবৈধ অভিবাসনের কারণে স্থানীয় সম্পদ, চাকরি এবং নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ত্রিপুরার কিছু এলাকায় বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই বিষয় নিয়ে দ্বিধা দেখা দিয়েছে, কারণ অনেকে মনে করছেন যে এটি সামাজিক সংঘাতের জন্য উপযুক্ত ভূমি তৈরি করতে পারে।
সরকারী তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তার দুর্বলতার সঙ্গে যুক্ত। ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার এখন এই সমস্যার সমাধানে বেশ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। গৃহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসকদের চিহ্নিত করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে, এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রশ্ন তোলছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গত জুলাই মাসে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষকে বিনা বিচারে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এই রিপোর্টে জোর দেওয়া হয়েছে যে, অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিকও ভুলভাবে অবৈধ অভিবাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়ছেন। এই বিতর্কের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ পাচ্ছে—কেউ দেশ প্রতিরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন, আবার কেউ এর মানবিক দিকটির প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করছেন।
স্থানীয় নেতারা এবং রাজনৈতিক দলগুলোও এই বিষয়ে ভাগাভাগি পড়ে গেছে। কিছু দল মনে করছেন যে, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা জরুরি, আবার অন্যরা বলছেন যে এই কঠোর পদক্ষেপ সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ত্রিপুরার একজন সাংসদ বলেছেন, “আমরা সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখতে চাই, কিন্তু এর সঙ্গে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই রাখতে হবে।”
এই পরিস্থিতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এখনও এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি, কিন্তু বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার আওতায় আসতে পারে। ত্রিপুরার জনগণ এখন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও অভিবাসন নীতির কার্যকারিতা নিয়ে নজর রাখছে, যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।