বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় শুক্রবার ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। দ্রুতগামী বন্দেভারত এক্সপ্রেসের ধাক্কায় (Vande Bharat accident) মৃত্যু হয়েছে চারজন কিশোর শ্রমিকের, গুরুতর আহত হয়েছে আরও একজন। পুলিশ ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে ভোর প্রায় ৫টার সময়, যখন পাঁচজন কিশোর দুর্গাপুজোর মেলা দেখে বাড়ি ফিরছিল।
উত্তর ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের (NF Railways) অধীনে কসবা ও পূর্ণিয়া জংশনের মধ্যে মাদারঘাট এলাকার কাছে ঘটে এই দুর্ঘটনা। অরারিয়ার জোগবানি থেকে পাটলিপুত্রগামী বান্দে ভারত এক্সপ্রেস তখন উচ্চগতিতে চলছিল। সেই সময় রেললাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছিল পাঁচজন কিশোর। আচমকা ট্রেনটি সামনে চলে আসায় তারা সরে যেতে পারেনি এবং মুহূর্তের মধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে।
পূর্ণিয়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মুননা কুমার জানান, “শুক্রবার মাদারঘাটের কাছে বন্দেভারত ট্রেনের ধাক্কায় পাঁচজন কিশোর দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যায়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়।” গুরুতর আহত একজনকে পূর্ণিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল (GMCH)-এ ভর্তি করা হয়েছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তাঁরা সবাই মধেপুরা জেলার মুরলিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এবং পূর্ণিয়ার একটি মাখানা প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ঘটনার সময় তাঁরা ছুটিতে পুজোর মেলা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। মৃতদের পরিবারের কাছে ইতিমধ্যে খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মৃতদেহ পূর্ণিয়া জিএমসিএইচ-এ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় প্রায়ই রেললাইনের উপর দিয়ে পথচারীরা যাতায়াত করেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা ফেন্সিং না থাকার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। এই ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি তুলেছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনার প্রতি শোকপ্রকাশ করে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনও মৃতদের পরিবারের আর্থিক সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করছে।
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলের এলাকায় সচেতনতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে। মাত্র ১৪-১৫ বছর বয়সী চারটি প্রাণ এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় পূর্ণিয়া ও আশপাশের এলাকা শোকস্তব্ধ। দুর্ঘটনার পর রেললাইনের পাশে স্থানীয়দের জমায়েত হয় এবং প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি ওঠে।
দেশের আধুনিক ও দ্রুততম ট্রেনগুলির মধ্যে একটি বান্দে ভারত এক্সপ্রেসের সঙ্গে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ট্রেনের গতি যেমন উন্নয়নের প্রতীক, তেমনি তা মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে যদি নিরাপত্তার অভাব থেকে যায়।