সন্ত্রাসবাদী নয়, বিপ্লবীর মুখোশেই আরও ভয়ংকর ষড়যন্ত্র কাশ্মীরের জঙ্গি টাইগার্সদের?

ঘরানা পাল্টাচ্ছে কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীরা (Kashmir Terror Attacks)? সাম্প্রতিককালে বারংবার জম্মু-কাশ্মীর উঠে আসছে খবরের শিরোনামে (Kashmir Terror Attacks)। একের পর এক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ (Kashmir Terror Attacks),…

Image related to a terrorist attack in Kashmir, possibly showing a damaged vehicle, debris, or a scene of destruction, with a somber or ominous tone.

ঘরানা পাল্টাচ্ছে কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীরা (Kashmir Terror Attacks)? সাম্প্রতিককালে বারংবার জম্মু-কাশ্মীর উঠে আসছে খবরের শিরোনামে (Kashmir Terror Attacks)। একের পর এক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ (Kashmir Terror Attacks), সেনা জওয়ানদের শহীদ হওয়া, জম্মু-কাশ্মীরকে যেন এক মৃত্যু উপত্যকাতে পরিণত করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এরকম ভাবে আতঙ্কবাদীদের তৎপরতা এবং উগ্রতা বেড়ে গেল কেন? উপত্যকার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কাশ্মীর টাইগার্সের কী লক্ষ্য আরও অনেক বড় কিছু?

এতক্ষণে আমরা সবাই জেনে গিয়েছি যে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জঈস -ই- মহম্মদেরই শাখা সংগঠন এই কাশ্মীর টাইগার্স। কিন্তু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন পাকিস্তানে বসে কী করে ভারতের মাটিতে এত শক্ত নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে? বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানার পরে, জঙ্গিরা ভোজবাজির মত উধাও হয়েছে। স্থানীয় জঙ্গলে বা উপত্যকার একাধিক এলাকাতে তারা গা ঢাকা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে স্থানীয়দের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এটা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে এটাও মনে করা হচ্ছে যে, স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এই জঙ্গি সংগঠনের প্রবলভাবে যোগাযোগ এবং প্রত্যক্ষভাবে হানাতে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা আছে। অন্তত প্রাথমিকভাবে হামলার গতিপ্রকৃতি দেখে প্রাক্তন সেনাকর্তাদের এই অভিমত।

   

BJP West Bengal: সিবিআই দিয়ে নেতা গ্রেফতার ‘দাদা’রই কীর্তি! মারাত্মক স্বীকারোক্তি সুকান্তর?

এতদিন ধরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নামের ক্ষেত্রে একটা লক্ষ্যনীয় বিষয় দেখা গিয়েছিল। সাধারণত একটি বিশেষ ধর্মীয় পরিচয় নামগুলো থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যেত। কিন্তু ২০২১ সালে প্রথম খবরে আসা এই কাশ্মীর টাইগার্সের নামের মধ্যে কোন ধর্মীয় পরিচয় স্পষ্ট নয়। প্রচলিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনদের সাথে নামের কোনও মিলও পাওয়া যাচ্ছে না। বরং শ্রীলঙ্কায় প্রভাকরণের তামিল টাইগার্সের মতোই শুনতে লাগছে এই সংগঠনের নামটাকে। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লোকের পর থেকে যেন আরও বেশি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এই নতুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি।

মনে করা হচ্ছে যে, জম্মু-কাশ্মীরের এই বিশেষ ধারা লোপের পর স্থানীয় মানুষদের মনে জমে থাকা ক্ষোভকে পুঁজি করেই ক্রমশ ডালপালা বিস্তার করছে এই সংগঠন। স্থানীয় পুলিশ মহলের বক্তব্য, আদতে লস্কর-ই-তৈবা এবং জঈস-ই-মহম্মদের মুখোশধারী সংগঠন এই টাইগার্স। কিন্তু তাদের কাজের পদ্ধতি এবং লক্ষ্য যেন অনেকটাই আলাদা। ধর্মীয় নয় বরং তারা একটা সুপরিকল্পিত ‘বৈপ্লবিক-রাজনৈতিক’ পরিচয় তৈরি করার চেষ্টা করছে। এমনটাই মনে করছেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ মহলের অনেকে।

অর্থাৎ যেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য সশস্ত্র আন্দোলনের পথে হেটেছে মাওবাদীরা। যেভাবে আমদের পড়শী দেশ শ্রীলঙ্কায় তামিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা আক্রমন করে রুখে দাঁড়িয়েছিল তামিল টাইগার্সরা। ঠিক সেই ভাবেই সেই রকম একটা ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা করছে এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কাশ্মীর টাইগারস? সেই সম্ভাবনাই কিন্তু এখন সব থেকে বেশি মাথায় আসছে। আর এই ভাবেই কী স্থানীয়দেরও সহানুভূতি আদায় করে নিচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা?

সম্ভবত তাতেই আক্রমণের ধার বাড়ছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় পুলিশ থেকে শুরু করে সেনা, সবাইকে রীতিমতন নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে এই নতুন জঙ্গি সংগঠন। সন্ত্রাসবাদকে গ্ণবিপ্লবের মোড়কে নতুন উপস্থাপনায় তারা পাশে পেতে চাইছে জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় তরুণদেরও। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য সেই কাজে তারা কিছুটা হলেও সফল হয়েইছে। পরপর একাধিক আক্রমণ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ্য হয় পুলিশ অফিসার, না হলে সেনা আধিকারিক বা সেনাদের কনভয়। ঘটনার পরপরই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি। গোটা কাশ্মীর জুড়ে এখন যেন সন্ত্রাসের নতুন এক কুমিরডাঙ্গা খেলা চলছে।

কেন্দ্রের বড় কথা শুধুই ঘোষণা? পিএম কেয়ার শিশু প্রকল্পে ৫১ শতাংশের আবেদনই বাতিল

বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে ২০২১ সাল থেকে এখনো অব্দি প্রায় সন্ত্রাসবাদী হামলাতে 70 জন মারা গিয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ৫২ জনেরও বেশি শুধুমাত্র সেনা সদস্য। একটা কথা পরিষ্কার যে সন্ত্রাসবাদি সংগঠনের মূল লক্ষ্যই হলো ভারতীয় সেনা। গত এক মাসে প্রায় তিনটি বড় আক্রমণ হয়েছে সেনার উপর। জুন মাসের ১২ তারিখে জম্মু-কাশ্মীরের ডোডা এলাকাতে টাইগার্সদের আক্রমণে শহীদ হন চারজন সেনা। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই জুলাইয়ের ৯ তারিখে কাঠুয়াতে আবারও সেনা কনভয়ের উপরে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। এবারও শহীদ পাঁচজন সেনা জওয়ান।

আর তারপর ১৬ই জুলাই আবারও সেই ডোডা জেলাতে সন্ত্রাসবাদী হামলা। এবারও শহীদ চারজন সেনা জওয়ান। এক অদ্ভুত প্যাটার্ন যেন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হঠাৎ করে অতর্কিতে গেরিলা ধাঁচের আক্রমণ এবং তারপরেই পালিয়ে গা ঢাকা দেওয়া। যা বারবার প্রমাণ করছে যে বাইরে থেকে নয় সন্ত্রাসবাদীরা লুকিয়ে আছে উপত্যকার মধ্যেই। সেই সঙ্গে হামলার পর উদ্ধার হওয়া অস্ত্র থেকে গোটা ঘটনায় পাকিস্তানের যোগসাজস স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ যে আমেরিকান রাইফেল পাকিস্তানি সেনারা ব্যবহার করে,হামলাস্থল থেকেও পাওয়া গেছে সেই একই অস্ত্র।

সব মিলিয়ে সন্ত্রাসবাদ যেন এক নতুন চেহারায় উপস্থিত হয়েছে কাশ্মীরের উপত্যকায়। একদিকে বিপ্লবী ভাবমূর্তি তৈরীর চেষ্টা। স্থানীয়দের ক্ষোভকে ঠিকঠাক মতো কাজে লাগানো। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থের আমদানি। সবমিলিয়ে ভূস্বর্গ এখন সত্যিই ভয়ঙ্কর। ৩৭০ ধারা বিলোপ কতটা এর জন্য দায়ী, যথেষ্ট বিতর্ক হবে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের এই নতুন অবতারকে সামলাতে এই মুহূর্তে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ নিতেই হবে। তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।

জনমানসে সন্ত্রাসবাদীদের ইমেজ যদি একবার নায়কের ভূমিকায় চলে আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে কী বিপদ যে হতে পারে, তা জম্মু-কাশ্মীর আগেও বারবার দেখেছে। শ্রীলংকার তামিল টাইগার্সদের উদাহরণ চোখের সামনেই রয়েছে ভারতীয় সরকারের। ফলে ভুস্বর্গের এই বাঘ-বন্দী খেলাতে সেনা থেকে সরকার সবাইকে এখন মনস্তাত্ত্বিক খেলাও খেলতে হচ্ছে।