Monday, December 8, 2025
HomeBharatডবল ভোটার কার্ড মামলায় আরও বিপাকে তেজস্বী

ডবল ভোটার কার্ড মামলায় আরও বিপাকে তেজস্বী

- Advertisement -

রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) নেতা এবং বিহার বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা তেজস্বী যাদব (Tejashwi)দুটি ভোটার আইডি কার্ড রাখার অভিযোগে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) তাঁকে এই বিষয়ে দ্বিতীয়বার নোটিশ পাঠিয়েছে, কারণ তিনি প্রথম নোটিশের জবাব দেননি।

নির্বাচন কমিশন তেজস্বীকে দুই দিনের মধ্যে এই বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিতে বলেছে। এই ঘটনা বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের (অক্টোবর-নভেম্বর ২০২৫) প্রাক্কালে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে আরজেডি নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

   

বিতর্কের সূচনা

গত ২ আগস্ট, ২০২৫-এ তেজস্বী যাদব একটি সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন যে, বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁর ইলেক্টরস ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (ইপিক) নম্বর RAB2916120 প্রদর্শন করে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করেন, যেখানে ফলাফল ছিল “কোনও রেকর্ড পাওয়া যায়নি”।

তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, “আমার নাম ভোটার তালিকায় না থাকলে আমি কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব?” তবে, নির্বাচন কমিশন তৎক্ষণাৎ এই দাবি খারিজ করে জানায় যে, তেজস্বীর নাম পাটনার দিঘা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় রয়েছে, যার ইপিক নম্বর RAB0456228 এবং তিনি ২০৪ নম্বর ভোটকেন্দ্রে ৪১৬ নম্বর ক্রমিকে তালিকাভুক্ত।

নির্বাচন কমিশনের নোটিশ

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, তেজস্বী যে ইপিক নম্বর (RAB2916120) প্রদর্শন করেছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করা হয়নি। কমিশন তাঁকে এই ভোটার কার্ডের মূল কপি এবং বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করে।

প্রথম নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ৬ আগস্ট, ২০২৫-এ দ্বিতীয় নোটিশ পাঠানো হয়, যেখানে দুই দিনের মধ্যে স্পষ্টীকরণ দিতে বলা হয়েছে। কমিশনের মতে, তেজস্বীর দাবি “ভ্রান্ত” এবং “তথ্যগতভাবে ভুল”। এছাড়া, পাটনার জেলা নির্বাচন অফিসার ড. থিয়াগরাজন নিশ্চিত করেছেন যে, তেজস্বীর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে এবং তাঁর দাবি ভিত্তিহীন।

তেজস্বী যাদবের প্রতিক্রিয়া

তেজস্বী যাদব নির্বাচন কমিশনের নোটিশের জবাবে বলেছেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কোনও নোটিশ পাইনি, পাটনা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নোটিশ পেয়েছি। আমি এর একটি উপযুক্ত জবাব দেব। দুটি ইপিক নম্বর জারি হলে এর দায় কার? আমি তো একটি জায়গা থেকেই ভোট দিয়ে আসছি।”

তিনি অভিযোগ করেছেন যে, নির্বাচন কমিশন বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র পক্ষে কাজ করছে এবং ভোটার তালিকায় বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আরজেডি এই বিষয়ে আদালতে প্রমাণ পেশ করবে।

বিজেপি ও এনডিএ-র অভিযোগ

বিজেপি এবং এনডিএ-র নেতারা তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে দুটি ভোটার আইডি কার্ড রাখার অভিযোগ তুলে এটিকে “অপরাধ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “তেজস্বী যাদব মিথ্যা বলেছেন। তিনি কি ২০২০ সালের নির্বাচনী হলফনামায় ভুল তথ্য দিয়েছেন? এটি একটি গুরুতর অপরাধ।”

বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেছেন যে, দুটি ভোটার কার্ড রাখা একটি “অপরাধমূলক কাজ” এবং এর জন্য তেজস্বীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা উচিত। পাটনার দিঘা থানায় একজন আইনজীবী রাজীব রঞ্জন এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যদিও এখনও এফআইআর নথিভুক্ত হয়নি।

বাংলার মর্যাদা রক্ষায় রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই বিতর্ক বিহারের বিশেষ গভীর পুনরীক্ষণ (এসআইআর) প্রক্রিয়ার পটভূমিতে ঘটেছে, যাকে বিরোধী দলগুলি “ভোটার বঞ্চনার ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছে। তেজস্বী দাবি করেছেন, প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আরজেডি-র মূল ভোটব্যাঙ্কের সম্প্রদায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কোনও রাজনৈতিক দল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটার তালিকায় নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেনি।

তেজস্বী যাদবের দুটি ভোটার আইডি কার্ড মামলা বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় নোটিশ এবং বিজেপির আইনি ব্যবস্থার দাবি এই ইস্যুকে আরও জটিল করেছে। তেজস্বী যদি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন যে দ্বিতীয় ইপিক নম্বরটি প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে জারি হয়েছে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এই ঘটনা আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দেয়।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular