ভারতের তেজস মার্ক-১এ ইতিহাস তৈরি করতে প্রস্তুত, প্রথম উড়ান কবে?

Tejas Mark1A

নয়াদিল্লি, ১৩ অক্টোবর: ১৭ অক্টোবর ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এই দিনে, দেশীয়ভাবে তৈরি তেজস মার্ক-১এ (Tejas Mk-1A) যুদ্ধবিমান তার প্রথম উড্ডয়ন করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের (Defence Minister Rajnath Singh) উপস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের নাসিকে অবস্থিত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) ফেসিলিটি থেকে এই উড্ডয়নটি অনুষ্ঠিত হবে। তেজস মার্ক-১এ হল ভারত-উন্নত লাইট যুদ্ধ বিমানের (LCA) একটি উন্নত সংস্করণ। এটি একটি চতুর্থ প্রজন্মের বহুমুখী যুদ্ধবিমান, যা একই সাথে একাধিক মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম।

Advertisements

তেজাস মার্ক-১এ আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত
তেজাস মার্ক-১এ এর অত্যন্ত হালকা, দ্রুত এবং শক্তিশালী ক্ষমতা দ্বারা চিহ্নিত। এই বিমানটি ৮ থেকে ৯ টন অস্ত্র নিয়ে উড়তে পারে এবং একই সাথে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এতে স্থাপিত ইলেকট্রনিক রাডার, বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) মিসাইল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এবং আকাশ থেকে আকাশে জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা এটিকে একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানে পরিণত করে।

বিশেষ বিষয় হলো, তেজস সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় নকশাকৃত এবং তৈরি একটি বিমান। অতএব, প্রয়োজনে, কোনও বিদেশী কোম্পানির অনুমতি ছাড়াই দেশের কৌশলগত চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এই উদ্যোগকে ভারতের আত্মনির্ভর ভারত নীতির দিকে একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা গতি পাবে
তেজসের প্রথম উড্ডয়নের পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং হিন্দুস্তান টার্বো ট্রেনারের দ্বিতীয় উৎপাদন লাইন এবং তেজস এমকে-১এ-এর তৃতীয় উৎপাদন লাইনেরও উদ্বোধন করবেন। এই নতুন উৎপাদন লাইনগুলি দেশীয় বিমান উৎপাদন ক্ষমতা ত্বরান্বিত করবে এবং ভারতীয় বায়ুসেনা আগামী বছরগুলিতে অনেক নতুন দেশীয় বিমান পাবে।

বায়ুসেনা ৮৩টি তেজস বিমান পাবে
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) আগামী চার বছরে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে ৮৩টি তেজস মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়েছে। এই বিমানগুলি পুরনো মিগ-২১ স্কোয়াড্রনগুলিকে প্রতিস্থাপন করবে, যেগুলি এখন অবসরপ্রাপ্ত।

বর্তমানে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর মাত্র ২৯টি স্কোয়াড্রন রয়েছে, যেখানে চিন ও পাকিস্তানের বাড়তে থাকা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, কমপক্ষে ৪২টি স্কোয়াড্রন প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে, তেজাস মার্ক-১এ মোতায়েন ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি হিসেবে প্রমাণিত হবে।

আমেরিকান ইঞ্জিন বিলম্বের কারণ তেজাস প্রোগ্রামে কিছু বিলম্ব হয়েছে, মূলত আমেরিকান ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্বের কারণে। এই কারণে, প্রকল্পটি প্রায় দেড় থেকে দুই বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রধান ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তবে এখন কর্মসূচিটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।

আত্মনির্ভর ভারতের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ

তেজস মার্ক-১এ-এর উড্ডয়ন কেবল ভারতের বায়ু প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতারই প্রমাণ নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার দিকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলকও প্রমাণিত হবে। এই উড্ডয়নের মাধ্যমে, ভারত সেই নির্বাচিত দেশগুলির তালিকায় যোগ দেবে যারা দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরিতে সক্ষম। আগামী বছরগুলিতে তেজস মার্ক-১এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ড হতে চলেছে। এই বিমানটি কেবল ভারতের শক্তির প্রতীকই হবে না বরং দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।