নয়াদিল্লি: ‘এক মিনিটেই কনফার্ম টিকিট’, অথচ প্রকৃত যাত্রীরা খালি হাতে ফিরছেন। রেল মন্ত্রকের সমস্ত নজরদারি আর প্রযুক্তিগত কড়াকড়ির মধ্যেও তৎকাল টিকিট বুকিং-এর গোপন কালোবাজারি থামছে না। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সক্রিয় রয়েছে শতাধিক টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের চক্র, যেখানে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে বট সফটওয়্যার, আদার-ভেরিফায়েড আইডি ও OTP।
উন্মোচিত তৎকাল টিকিটের কালোবাজারি চক্র
প্রথমসারির এক সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। ৪০টির বেশি টেলিগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ট্র্যাক করেই তারা জানতে পেরেছে, আদতে এর ব্যাপকতা আরও অনেক বেশি। দেশের নানা প্রান্তে হাজার হাজার এজেন্ট এবং তথাকথিত ‘টেক এক্সপার্ট’ এই চক্রের অংশ এবং রোজগার করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
নতুন নিয়মে জোর, কিন্তু ততটাই ফাঁক Tatkal Ticket Scam Exposed
রেল মন্ত্রক ১ জুলাই থেকে জানিয়ে দেয়, তৎকাল টিকিট বুক করতে হলে IRCTC-তে লগইন করতে হবে শুধুমাত্র আধার-ভেরিফায়েড আইডি দিয়ে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ফেক অ্যাকাউন্ট এবং এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণে আনা।
কিন্তু নিয়ম জারি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলিতে বিক্রি শুরু হয়ে যায় আধার-প্রমাণীকৃত IRCTC আইডি ও OTP মাত্র ৩৬০ দামে। প্রমাণ মেলে একাধিক গ্রুপ পোস্টে।
কীভাবে কাজ করে বট চক্র?
India Today-এর তদন্তে দেখা যায়, ‘Fast Tatkal Software’ নামে এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রায় তিন মাস ধরে চলেছে অটোমেটেড টিকিট বুকিংয়ের প্রক্রিয়া। এই চক্রে মূলত দুই ধরনের চরিত্র-বট ডেভেলপার/অপারেটর, যারা সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করে৷ এজেন্ট, যারা এই বট কিনে নিজের ব্রাউজারে ইনস্টল করে, এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট বুক করে নেয়৷ এরা ‘Dragon’, ‘JETX’, ‘Ocean’, ‘Black Turbo’, ‘Formula One’-এর মতো নামী সফটওয়্যার বিক্রি করছে। দাম পড়ছে ৯৯৯ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এই বটগুলো লগইন থেকে শুরু করে ট্রেন নাম্বার, যাত্রীর তথ্য, পেমেন্ট ডিটেলস সব কিছু নিজে থেকেই পূরণ করে দেয়, কোনও ম্যানুয়াল ইন্টারভেনশন ছাড়াই। ফলে এক মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত টিকিট চলে যায় তাদের ঝুলিতে।
সাইবার ছায়ায় আইপি চেঞ্জ, ভাইরাস সংক্রমণ
IRCTC’র AI সিস্টেম যখন সন্দেহভাজন লগইন আইপি ব্লক করে দেয়, তখন এসব এজেন্টরা VPS (Virtual Private Server) ব্যবহার করে নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে ফেলে।
India Today একটি সফটওয়্যারের APK ফাইল বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, তা Trojan Malware— যা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিতে পারে।
সরকারি পদক্ষেপ কতটা কার্যকর?
রেল মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, তৎকাল বুকিং শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ মিনিটে প্রায় ৫০% লগইনই হয় বট থেকে।
সদ্য জারি হওয়া প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে-
*২.৫ কোটির বেশি ফেক ইউজার আইডি বাতিল করা হয়েছে
*তৎকাল বুকিং শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটে এজেন্ট বুকিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, AC এবং নন-AC দুই ক্ষেত্রেই
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যদি আধার বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে বট-ভিত্তিক কালোবাজারি এখনও চলতে পারে কীভাবে? কেন এত বছর পরেও IRCTC-এর সিস্টেমে সুরক্ষার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে?