HomeBharatআজাদ হিন্দ ফৌজের মুসলিমদের ধান্দাবাজ কটাক্ষ তথাগতের

আজাদ হিন্দ ফৌজের মুসলিমদের ধান্দাবাজ কটাক্ষ তথাগতের

- Advertisement -

কলকাতা: ইতিহাস নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। এ বার তাঁর নিশানায় আজাদ হিন্দ ফৌজের মুসলিম সৈনিকরা। তাঁর দাবি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজে যে মুসলিম যুদ্ধবন্দীরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই দেশপ্রেমের তাগিদে নয়, বরং জাপানি যুদ্ধবন্দী শিবির থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বার্থে সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়েছিলেন।

তথাগত রায় তাঁর এক্স পোস্টে লেখেন, “যে সব মুসলমান যুদ্ধবন্দী আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দিয়েছিল তারা দেশপ্রেম থেকে দেয়নি। অধিকাংশই দিয়েছিল সম্ভবত জাপানি যুদ্ধবন্দী ক্যাম্প থেকে মুক্তির জন্য।” এর পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি তাদের মধ্যে প্রবল দেশপ্রেম থাকত, তাহলে তাঁরা প্রথমেই ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন কেন? তাঁর আরও অভিযোগ, যাঁদের মধ্যে অনেকে পরবর্তীকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নাম লেখান এবং স্বাধীন ভারতের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

   

এই মন্তব্য জনসমক্ষে আসতেই রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে উত্তাপ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা, সমালোচনা ও পাল্টা যুক্তির ঝড়। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করছেন, আজাদ হিন্দ ফৌজ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নেতাজির আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটকে শুধুমাত্র যুদ্ধবন্দী মুক্তির স্বার্থে ব্যাখ্যা করা ইতিহাসকে সরলীকরণ করা হতে পারে।

কিছু ঐতিহাসিকের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনার বহু সদস্য জাপানিদের হাতে বন্দী হন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে নেতাজির নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দেন। কারও কাছে তা ছিল আদর্শ–প্রাণিত সিদ্ধান্ত, কারও ক্ষেত্রে ছিল জাপানি বন্দীদশার কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ। সেই সময়ের রাজনৈতিক–সামরিক বাস্তবতা ছিল জটিল, যা একক কারণে ব্যাখ্যা করা কঠিন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

অন্যদিকে বিজেপির কিছু নেতা তথাগত রায়ের দাবি সমর্থন করে বলেছেন, ইতিহাসে অনেক বিষয় নতুন তথ্য ও ব্যাখ্যার আলোকে উঠে আসে। তাই আজাদ হিন্দ বাহিনীর গঠনের প্রকৃত প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখা জরুরি। তবে বিরোধী শিবিরের দাবি, এই মন্তব্য ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা এবং নেতাজির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যের প্রতীকী বাহিনীকে খাটো করার প্রয়াস।

তথাগত রায়ের মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন প্রাক্তন সেনা আধিকারিকও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, আজাদ হিন্দ ফৌজ ছিল ভারতীয়দের এক বিরল সম্মিলিত প্রচেষ্টা—যেখানে ধর্ম, অঞ্চল বা ভাষার বিভেদ গুরুত্ব পায়নি। এই বাহিনীর অবদান শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং স্বাধীনতা সংগ্রামের মানসিক ও রাজনৈতিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলায় ছিল বিরাট ভূমিকা।

তবে বিতর্ক যে থামার নয়, তা স্পষ্ট। আজাদ হিন্দ ফৌজের মুসলিম সদস্যদের নিয়ে তথাগত রায়ের কটাক্ষ নতুন করে সামনে এনেছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই অধ্যায়ের মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া। অনেকেই মনে করছেন, ইতিহাসের এমন সংবেদনশীল অংশ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আরও সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক অন্দরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। এ ছাড়াও শিক্ষামহলে উঠেছে দাবি—ইতিহাসকে বর্তমান রাজনীতির পরিমণ্ডল দিয়ে নয়, বরং প্রেক্ষাপট, নথি ও সমসাময়িক বাস্তবতা দিয়ে বিচার করাই উচিত।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular