বাংলাদেশি লেখিকা ও সমাজকর্মী তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) ফের শিরোনামে। সামাজিক মাধ্যমে এক বিস্ফোরক পোস্টে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার বহু ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের প্রতি যৌন হেনস্থার ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তাঁর মতে, “যেখানে নৈতিকতা ও মানবিকতা শেখানোর কথা, সেই স্থানগুলোই আজ অনেক সময় ভয় ও শোষণের প্রতীক হয়ে উঠছে।”
তসলিমার বক্তব্য সমাজজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “শিক্ষক বা ধর্মীয় গুরুর দায়িত্ব শুধু ধর্ম শেখানো নয়, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা ও ধর্ম— এই দুই ক্ষেত্রের কিছু ব্যক্তি তাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে নৃশংসতার আশ্রয় নিচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গেরুয়া রাজ্যে তালা পড়ল মাদ্রাসা বোর্ডে
লেখিকার মতে, সমস্যাটি কোনো এক ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাবের ফল। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক বিকাশ গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তসলিমা নাসরিন প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা কি আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পরিবেশ দিচ্ছি? ধর্মের নামে যদি শিক্ষা হয় ভয় বা অপরাধের উৎস, তাহলে সেই শিক্ষা সমাজকে কী দিচ্ছে?”
এই বক্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কেউ কেউ তাঁর সাহসিকতাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করা উচিত নয়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শিশুদের যৌন হেনস্থার ঘটনা শুধু এক অঞ্চল বা এক ধর্মে সীমাবদ্ধ নয় — তা স্কুল, আশ্রম, মাদ্রাসা, এমনকি পরিবারেও ঘটছে।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতে হাজার হাজার শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অপরাধ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শুধু অপরাধীকে শাস্তি দিলেই চলবে না, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার পুনর্গঠন প্রয়োজন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ‘চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, শিশুদের এমনভাবে বড় করতে হবে যেন তারা ভয় না পেয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানাতে পারে। সমাজের নীরবতা অনেক সময় অপরাধীদের সাহস জোগায়। তসলিমা নাসরিনের এই মন্তব্য তাই নতুন করে সামনে এনেছে একটি পুরনো প্রশ্ন — “শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কী?” শুধু ধর্ম বা পাঠ্যবই নয়, মানুষ গড়ার শিক্ষাই আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।