জেরার মুখে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি ২৬/১১ চক্রী তাহাউর রানার

২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী তাহাউর হুসেন রানা (Tahawwur Rana) সম্প্রতি ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হেফাজতে থাকাকালীন চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন,…

Tahawwur Rana confession

২০০৮ সালের মুম্বই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী তাহাউর হুসেন রানা (Tahawwur Rana) সম্প্রতি ভারতীয় জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হেফাজতে থাকাকালীন চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলি পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-তৈয়বার (এলইটি) আয়োজিত একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন।

রানা, (Tahawwur Rana) যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক, দিল্লির তিহার জেলে এনআইএ-র হেফাজতে থাকাকালীন মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্বীকারোক্তি ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং এলইটি-র ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোকপাত করেছে।

   

তাহাউর রানার স্বীকারোক্তি (Tahawwur Rana)

রানা (Tahawwur Rana) জানিয়েছেন, তিনি এবং হেডলি ২০০৩ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে পাকিস্তানে লশকর-ই-তৈয়বার তিনটি প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, এলইটি শুধু একটি জঙ্গি সংগঠন নয়, বরং একটি পরিশীলিত গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে, যা দক্ষিণ এশিয়া এবং তার বাইরেও তথ্য সংগ্রহ করে। রানা আরও স্বীকার করেছেন, তিনি ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর মুম্বাইয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং পাওয়াইয়ের একটি হোটেলে ছিলেন।তিনি ২১ নভেম্বর দুবাই হয়ে বেজিংয়ের উদ্দেশে মুম্বাই ত্যাগ করেন, যা হামলার মাত্র পাঁচ দিন আগে।

হেডলি ও রানার সম্পর্ক

তাহাউর রানা (Tahawwur Rana) এবং ডেভিড হেডলির বন্ধুত্ব পাকিস্তানের হাসান আবদাল ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার সময় থেকে শুরু। রানা, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন, পরে কানাডায় চলে যান এবং ২০০১ সালে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি শিকাগোতে ‘ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস’ নামে একটি ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি ব্যবসা শুরু করেন, যা পরে হেডলির নজরদারি কার্যক্রমের জন্য ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হেডলি, যিনি পাকিস্তানি-আমেরিকান বংশোদ্ভূত, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এলইটি-র পাঁচটি প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে, তিনি রানার সঙ্গে শিকাগোতে দেখা করেন এবং ভারতে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার জন্য তাঁর ব্যবসার ছদ্মবেশ ব্যবহারের অনুমতি পান।

মুম্বই হামলায় রানার ভূমিকা

এনআইএ-র চার্জশিট অনুযায়ী, রানা (Tahawwur Rana)হেডলিকে ভারতে ভিসা পেতে এবং মুম্বইয়ে একটি ইমিগ্রেশন অফিস স্থাপনের জন্য সহায়তা করেছিলেন। এই অফিসটি হেডলির নজরদারি কার্যক্রমের জন্য একটি কভার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

হেডলি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে মুম্বই, দিল্লি, জয়পুর, গোয়া, পুনে এবং অন্যান্য শহরে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন এবং তাজমহল প্যালেস হোটেল, ওবেরয় হোটেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এবং চাবাড হাউসের মতো লক্ষ্যবস্তুর উপর নজরদারি করেছেন। রানা এই সময়ে হেডলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন এবং তাঁর ভ্রমণ ও কার্যক্রমে সহায়তা করেছিলেন।

Advertisements

আইএসআই-এর ভূমিকা

রানার (Tahawwur Rana)স্বীকারোক্তিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ভূমিকাও উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, এলইটি এবং আইএসআই-এর সঙ্গে একত্রে তিনি এবং হেডলি মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। রানা দাবি করেছেন, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত এজেন্ট ছিলেন এবং তাঁর ভূমিকা ছিল হেডলির জন্য লজিস্টিক এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

তিনি মেজর ইকবাল এবং সাজিদ মীরের মতো আইএসআই এবং এলইটি-র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন।

ভারতীয়র হাতে সিঙ্গাপুরের কাছে আস্ত দ্বীপ! তৈরি হবে স্কুল

আইনি পদক্ষেপ এবং তদন্ত

২০২৫ সালের এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে প্রত্যর্পণের পর রানাকে তিহার জেলে উচ্চ নিরাপত্তা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এনআইএ তাঁকে ষড়যন্ত্র, হত্যা, সন্ত্রাসবাদ এবং জালিয়াতির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তাঁর স্বীকারোক্তি ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগকে শক্তিশালী করেছে যে মুম্বই হামলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিচালিত হয়েছিল। এনআইএ এখন রানার ভ্রমণ এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়ে আরও তদন্ত করছে।