বাংলার রাজনৈতিক মহলে বুথ লেভেল অফিসারদের নিয়ে এবার শুরু হয়েছে বিতর্ক (Suvendu)। মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছেন তার কিংবা মূখ্য সচিব মনোজ পন্থের অনুমতি ছাড়াই তাদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিরোধী দল বিজেপি মমতার এই বক্তব্যকে অনধিকার হস্তক্ষেপ বলে দাবি করেছে।
বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে ‘সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘স্তাবক’ মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করে দিল্লিতে প্রশিক্ষিত ১,০০০ BLO-কে প্রতিস্থাপনের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন।
শুভেন্দু নির্বাচন কমিশনের কাছে এই ‘অবৈধ হস্তক্ষেপের’ তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।শুভেন্দু অধিকারীর দাবি অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে BLO-দের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তাঁকে বা মুখ্যসচিবকে না জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি BLO-দের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কর্মচারী এবং কোনও ভোটারের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না যায়। শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এটি গণতন্ত্রের উপর আঘাত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলা শাসকদের (যারা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা DEO হিসেবে কাজ করেন) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন যে দিল্লিতে প্রশিক্ষিত BLO-দের সরিয়ে অন্য কর্মীদের নিয়োগ করতে হবে।শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের কাছে এই ঘটনার তাৎক্ষণিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “এই অনৈতিক ও অবৈধ হস্তক্ষেপ সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘনের সমান। যদি দোষ প্রমাণিত হয়, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” তিনি নির্বাচন কমিশনকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল, প্রশাসন এবং ভোট কুশলী সংস্থাকে মাঠে নামিয়েছেন।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করা সাংবিধানিক অপরাধ।” শুভেন্দু জেলা শাসকদের (DEO) প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, তারা যেন রাজ্য সরকারের কোনও মৌখিক নির্দেশ মানেন না, কারণ তা নির্বাচন কমিশনের নিয়মের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার যদি এই নির্দেশ বৈধ মনে করত, তবে লিখিতভাবে জানাত। মৌখিক নির্দেশ অগ্রাহ্য করুন।” তিনি আরও জানান, EROnet পোর্টালে নাম আপলোড করা BLO-দের শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পরিবর্তন করা যায়।
জরুরি পরিস্থিতিতে যুক্তিযুক্ত কারণে এবং একই বিভাগীয় প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব সিইও-এর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “ERO এবং DEO-দের কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়ম ভঙ্গ করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।” এই অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, “তৃণমূল সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন কমিশনের এই বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত।” তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র রাজ্যের ভোটারদের অধিকার রক্ষা করতে চান। আবার তৃণমূল বলেছে, “বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বাংলার ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটার চক্রান্ত করছে।
মুখ্যমন্ত্রী শুধু ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন।”
লাদাখে সামরিক কনভয়ের দুর্ঘটনা, নিহত দুই সেনা
শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের BLO প্রশিক্ষণে হস্তক্ষেপ এবং মুখ্যসচিবের মৌখিক নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে অনধিকার চর্চার অভিযোগকে জোরালো করেছে। নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন প্রক্রিয়া সুরক্ষিত রাখে, তা এখন সবার নজরে।