ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে নয় সদস্যের বেঞ্চ জানায় যে, সব ব্যক্তিগত সম্পত্তিই ‘সম্প্রদায়ের উপাদান সম্পদ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে না এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিগ্রহণে রাজ্যগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
মামলার পটভূমি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার
এই রায়টি আসে মুম্বাইয়ের প্রপার্টি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (POA) প্রতিনিধিদের আবেদনের ভিত্তিতে, যারা দাবি করেছিলেন যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি কোনোভাবে রাষ্ট্রের অধীনে আনার ক্ষমতা সংবিধানের ৩৯(বি) ও ৩১(সি) ধারার মাধ্যমে বৈধতা পেতে পারে না। এর মাধ্যমে রাজ্যগুলি সংবিধানের ধারণা অনুযায়ী জনগণের সাধারণ কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিতে পারে, তবে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা প্রযোজ্য হবে।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই রায়ে বলেন, “আমরা মনে করি, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অধিকারকৃত প্রতিটি সম্পদই সম্প্রদায়ের জন্য উপাদান সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না, শুধুমাত্র এটি কোনো উপাদান চাহিদা পূরণ করতে পারলেই তা নয়।” বেঞ্চ আরও জানায় যে, সংশ্লিষ্ট সম্পদকে সম্প্রদায়ের সম্পদ হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ বিচার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সম্পদের প্রকৃতি, তার বৈশিষ্ট্য, সম্প্রদায়ের ওপর তার প্রভাব, সম্পদের সঙ্কট এবং একে ব্যক্তিগত হাতে কেন্দ্রীভূত করা থেকে উদ্ভূত প্রভাব ইত্যাদি। এছাড়াও, সম্পদ যদি ‘জনগণের বিশ্বাসের নীতি’ মেনে চলে, তবে তাও এ সংজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারে।
সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার ও ভারসাম্য
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অধীনে আনার আগে আদালতকে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি নিয়ে বিচার করতে হবে এবং এটি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্ধারণ করা হবে। এই রায় অনুসারে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরাসরি জনগণের কল্যাণে প্রয়োজন কিনা, তার উপর নির্ভর করবে সম্পত্তি অধিগ্রহণের সম্ভাবনা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “কোনো সম্পদ ৩৯ (বি) ধারার অধীনে পড়ে কিনা তা নির্ধারণ করতে প্রেক্ষাপট নির্ভর এবং অ-সম্পূর্ণ একটি তালিকার ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।” সম্পদের স্বাভাবিক গুণাবলী ও মানুষের কল্যাণে তার প্রভাব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তার সঙ্কটময় অবস্থা এবং সম্পদটি ব্যক্তিগত দখলে থাকলে তার সম্ভাব্য প্রভাবকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও, ‘জনগণের বিশ্বাসের নীতি’ যেভাবে এই আদালত দ্বারা বিকশিত হয়েছে, তাও কোন সম্পদকে সম্প্রদায়ের সম্পদ হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
সংবিধানের ৩৯ (বি) ও ৩১ (সি) ধারা এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা
ভারতীয় সংবিধানের ৩৯ (বি) ও ৩১ (সি) ধারার অধীনে, রাজ্য সরকারের ক্ষমতা রয়েছে জনগণের কল্যাণের জন্য সম্পদ সংগ্রহ ও বিতরণ করতে। তবে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় স্পষ্ট করেছে যে, এই ধরনের ক্ষমতা সীমিত এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য। প্রতিটি সম্পত্তিকে “সম্প্রদায়ের উপাদান সম্পদ” হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি সরাসরি সম্পত্তির প্রয়োজন এবং তার জনকল্যাণমূলক ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। রাজ্যগুলোকে অনুমতি দেওয়া যাবে না যে তারা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে সেই সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়াই।
রায়ের প্রভাব ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
এই রায়টি ভারতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হবে। এটি একদিকে যেমন ব্যক্তিগত মালিকানার ওপর রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত করে, তেমনই ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরাসরি জনগণের কল্যাণে ব্যবহারযোগ্য কিনা তারও বিচার করার নির্দেশ দেয়। এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত ভারতের আইনি কাঠামোতে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিকার ও জনকল্যাণের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।