নয়াদিল্লি: দীপাবলির উৎসবে দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলিতে সীমিত সময়ের জন্য সবুজ আতসবাজি (Green Crackers) ব্যবহারের অনুমতি দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court)। বুধবার প্রধান বিচারপতি বি.আর. গবইয়ের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ জানিয়েছে, ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শুধুমাত্র সবুজ আতসবাজি পোড়ানো যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দীপাবলির দিনে সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে আতসবাজি পোড়ানো যাবে। আদালত বলেছে, “প্রতি বছর দীপাবলির সময় দিল্লির বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে মানুষকে উৎসব উদযাপনের সুযোগও দিতে হবে। তাই সীমিত পরিসরে সবুজ আতসবাজি অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।”
প্রধান বিচারপতি গবই আরও বলেন, “বাজারে অনেক অবৈধ আতসবাজি চলে আসে, যা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সেই তুলনায় সবুজ আতসবাজি তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। তবে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি অপরিহার্য।”
গত বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লি-এনসিআর, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় আতসবাজি তৈরী, বিক্রি, মজুত ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি সবুজ আতসবাজিও নিষেধের আওতায় ছিল। তবে এ বছর আদালত সেই রায়ে আংশিক ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র সবুজ আতসবাজির অনুমতি দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, কেবলমাত্র দিল্লি-এনসিআর এলাকার অনুমোদিত নির্মাতারাই সবুজ আতসবাজি প্রস্তুত করতে পারবেন। তাদের অবশ্যই ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (NEERI) এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস সেফটি অর্গানাইজেশন (PESO)-এর অনুমতি নিতে হবে। এনসিআর অঞ্চলের বাইরে থেকে আতসবাজি আনা যাবে না এবং কোনও ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে বিক্রিও নিষিদ্ধ।
বেঞ্চ আরও নির্দেশ দেয়, “প্রতিটি সবুজ আতসবাজির গায়ে QR কোড থাকতে হবে, যা অনলাইনে যাচাই করা যাবে। যদি ভুয়ো বা অননুমোদিত আতসবাজি পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতকারকের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।”
দিল্লি পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে বিশেষ টহল দল গঠন করে ১৮ অক্টোবর থেকে শহরের বায়ু মান পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, উৎসব চলাকালীন ও তার পরে দূষণের মাত্রা ও তার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) এবং রাজ্য দূষণ বোর্ডকে (SPCB)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত একদিকে দীপাবলির আনন্দে উৎসবের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে, অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণেও এক ধাপ এগিয়ে দেবে দেশকে। তবে আদালতের শর্ত না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে বেঞ্চ।
সবুজ আতসবাজির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এতে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের নিঃসরণ অনেক কম হয়। ফলে দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। তবুও আদালতের নির্দেশ— “আনন্দের সঙ্গে দায়িত্বশীলতাও বজায় রাখতে হবে।”