সম্ভলের শাহি জামে মসজিদ (Sambhal mosque) ও হরিহর মন্দিরকে কেন্দ্র করে জমে ওঠা বিতর্কে নতুন মোড়। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি হিন্দু পক্ষের আবেদনকারীদের কাছে নোটিশ জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি পি এস নারসিমহা ও বিচারপতি এ এস চন্দুরকরের দ্বি-সদস্য বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করেন।
উত্তরপ্রদেশের সম্ভল জেলার শাহি জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে একাধিক পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। হিন্দু পক্ষ দাবি করে, মুঘল আমলের এই মসজিদের নীচে আসলে হরিহর মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। এই দাবির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর সম্ভলের দেওয়ানি আদালত কমিশনার নিয়োগ করে মসজিদের সার্ভে করার নির্দেশ দেয়।
আদালতের ওই নির্দেশে একই দিনেই প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। তবে মসজিদ কমিটি এই সমীক্ষার বিরোধিতা করে বলে, সার্ভে আদৌ আইনসঙ্গত নয়। তাদের যুক্তি, শুধু মসজিদ নয়, সংবেদনশীল ধর্মীয় স্থানের ক্ষেত্রে এভাবে হঠাৎ আদালতের নির্দেশে সমীক্ষা চালানো হলে অপ্রত্যাশিত অশান্তি ছড়াতে পারে।
শুধু প্রথম সমীক্ষাই নয়, তার পাঁচ দিন পর, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর ২০২৩-এ আরও একটি সমীক্ষা চালানো হয়। মসজিদ কমিটি দাবি করে, আদালত দ্বিতীয়বার সমীক্ষার কোনো নির্দেশই দেয়নি। সুতরাং দ্বিতীয় সার্ভে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অযৌক্তিক। এই অভিযোগকে সামনে রেখেই মসজিদ কমিটি Allahabad High Court-এ রিট পিটিশন দায়ের করে।
গত বছর হাইকোর্ট মসজিদ কমিটির সেই রিট খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল—
দেওয়ানি আদালত কমিশনার নিয়োগ করার অধিকার রাখে।
আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সার্ভে আইনগতভাবে টেকসই।
মামলাটি শুনানির যোগ্য।
এর ফলে হিন্দু পক্ষের দাবি অনুযায়ী সার্ভের বৈধতা টিকে যায়।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে মসজিদ কমিটি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায়। তাদের বক্তব্য, একতরফাভাবে আদালতের নির্দেশে সার্ভে করানো হলে সেটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। তাছাড়া দ্বিতীয় সার্ভে আদৌ আদালতের নির্দেশে হয়নি, ফলে সেটিকে মান্যতা দেওয়া উচিত নয়।
শুক্রবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়—
1. মামলায় আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত status quo বা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে।
2. হিন্দু পক্ষের আবেদনকারীদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
3. পরবর্তী শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত বিস্তারিত নির্দেশ দেবে।
এই নির্দেশে আপাতত মসজিদ কমিটির স্বস্তি মিলেছে। কারণ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট পর্যন্ত নতুন কোনো পদক্ষেপ বা কার্যক্রম নেওয়া যাবে না।
সম্ভল মসজিদ মামলাটি স্থানীয় স্তরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষত অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের পর থেকে উত্তরপ্রদেশের একাধিক ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে আইনি লড়াই জোরদার হয়েছে। কয়েক মাস আগে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ ও বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে একই ধরনের মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মামলা কেবল আইনি নয়, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলার উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। মসজিদ কমিটি তাদের আবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘‘ধর্মীয় স্থানের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে এভাবে বারবার সমীক্ষা চালানো হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজন গভীর হবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী।’’
অন্যদিকে হিন্দু পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘ইতিহাস জানার অধিকার সবারই আছে। যদি মন্দিরের চিহ্ন মসজিদের ভিতরে থাকে, তবে সত্যিটা সামনে আসতেই হবে। আদালতের সার্ভে কোনোভাবেই বেআইনি নয়।’’
এখন সবার নজর ২৫ আগস্টে। ওই দিন সুপ্রিম কোর্ট মামলার পরবর্তী শুনানি নেবে এবং স্থিতাবস্থা বহাল থাকবে কি না, তা স্পষ্ট করবে। আদালত যদি মসজিদ কমিটির পক্ষে যায়, তবে দ্বিতীয় সার্ভেকে বেআইনি ঘোষণা করা হতে পারে। আবার যদি হিন্দু পক্ষের যুক্তিকে মান্যতা দেয়, তবে ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত সমীক্ষার রাস্তা খুলে যেতে পারে।
সম্ভল মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অস্থায়ী স্থিতাবস্থা নির্দেশ আপাতত একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ানো দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা কমিয়েছে। তবে এই মামলা কেবল সম্ভল নয়, সারা দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম। আগামী ২৫ আগস্টের শুনানি তাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।