অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে দায়ের হওয়া হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তীব্র আলোচনার ঝড় ওঠে। বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকা প্রধান বিচারপতি সুর্য কান্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আপনারা কি চান আমরা ওদের জন্য লালগালিচা বিছিয়ে দিই?”
আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, দেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভূগর্ভস্থ পথ এবং অনিয়ন্ত্রিত রুট দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে, এরপরই রাষ্ট্রের কাছ থেকে খাবার, থাকার জায়গা ও সুরক্ষার দাবি তুলছে। প্রধান বিচারপতির তীক্ষ্ণ মন্তব্য, “আমাদের গরিব শিশুদের কি এই সুবিধার অধিকার নেই? আইনকে কি এতদূর টানতে হবে?”
নিরাপত্তা-ঝুঁকি
উত্তর ভারতের অত্যন্ত সংবেদনশীল সীমান্তাঞ্চলকে সামনে রেখে বেঞ্চ নিরাপত্তা-ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করে। বিচারপতির ভাষায়, “একজন অনুপ্রবেশকারী অবৈধ পথে ঢুকলে, তাকে রাখার দায় কি দেশের উপর বর্তাবে?”
শুনানিতে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা পিটিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, আবেদনকারীর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনও যোগ নেই; এমন ব্যক্তির পক্ষে এই ধরনের PIL গ্রহণযোগ্য নয়।
স্বল্প সময়ের শুনানি শেষে আদালত জানায়, মামলাটি ফের তোলা হবে ১৬ ডিসেম্বর, সেদিনই পরবর্তী নির্দেশ দেবে আদালত।
রোহিঙ্গা বিতর্ক: মানবিক অধিকার বনাম জাতীয় নিরাপত্তা
ভারতে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। আন্তর্জাতিক মহলের বক্তব্য—নির্যাতন ও জাতিগত নিধন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়। অন্যদিকে, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—দেশ UN Refugee Convention-এর অংশ নয়, ফলে রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ নয়, অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মানবপাচার চক্র, ভুয়ো নথি
একাধিক গোয়েন্দা রিপোর্টে মানবপাচার চক্র, ভুয়ো নথি তৈরি এবং উগ্রপন্থী যোগাযোগের মতো ঝুঁকির দিক তুলে ধরা হয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসমের দুর্বল সীমান্ত পথ ধরে প্রবেশ করেছে; অনেকেই পরে দিল্লি, মেওয়াট, জম্মু, হায়দরাবাদে বস্তিবাসের মতো অবস্থায় রয়ে গেছে।
ভুয়ো আধার বা ভোটার কার্ডের মাধ্যমে মৌলিক পরিষেবা পাওয়ার অভিযোগও বারবার উঠেছে—যা কেন্দ্রের পক্ষের মূল যুক্তি: অবৈধ অনুপ্রবেশ ও জাল পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে কোনও সম্প্রদায়কে সীমাহীন অধিকার দেওয়া যায় না।
