সংখ্যালঘুদের গণপিটুনি মামলায় বড় সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের

supreme-court-dismisses-jamiat-ulama-i-hind-mob-lynching-compensation-plea

নয়াদিল্লি: সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল যে, একটি একক জনস্বার্থ মামলা (PIL) হিসেবে গণপিটুনির শিকারদের ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে তদন্ত ও নিষ্পত্তি করতে হবে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে শীর্ষ আদালত ইসলামি সংগঠন জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের দায়ের করা আবেদন সম্পূর্ণরূপে খারিজ করে দেয়।

Advertisements

আবেদনে সংগঠনটি দাবি করেছিল, দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেড়ে চলা গণপিটুনির ঘটনায় নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, অথচ ভুক্তভোগী পরিবারগুলি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। তাদের যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, ফলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সরকারের কর্তব্য।

   

রাজস্থানে ভারতীয় সেনার হাই-টেক যুদ্ধ মহড়া ‘এক্সারসাইজ মরু জ্বালা’

তবে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ, যা বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং বিচারপতি কেবি কল নেতৃত্বে ছিল, স্পষ্ট জানায় “প্রতিটি মব লিঞ্চিং আলাদা পরিস্থিতিতে ঘটে। তাই এমন ঘটনাগুলি একত্রে বিচার করা যায় না। ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে প্রতিটি ঘটনার জন্য পৃথক মামলা করতে হবে।”

বেঞ্চ আরও জানায়, জনস্বার্থ মামলা হিসেবে এমন আবেদনের মাধ্যমে আদালতের সীমিত বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা যায় না। আদালত নির্দেশ দেয়, রাজ্য সরকারগুলির দায়িত্ব প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।

জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের আইনজীবী যুক্তি দেন, দেশে বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের গণপিটুনির ঘটনায় একরকম ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। কিন্তু আদালত তাতে সায় দেয়নি। বরং জানায়, বিচার প্রক্রিয়া সবার জন্য সমান, এবং “আইনের চোখে সবাই এক।”

Advertisements

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিল যে PIL ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সামগ্রিক ক্ষতিপূরণ বা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা আদালত সমর্থন করবে না। বরং, বিচারব্যবস্থা চায় তথ্যনির্ভর, স্বতন্ত্র মামলা যেখানে প্রমাণ ও তদন্তের ভিত্তিতে রায় দেওয়া সম্ভব।

উত্তরপ্রদেশের আলাহাবাদ হাইকোর্ট আগেই একই পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল, এবং সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়কেই বহাল রাখল। এই রায়ের ফলে গণপিটুনি সংক্রান্ত একাধিক PIL এখন থেকে আর একত্রে দায়ের করা যাবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় একদিকে যেমন আদালতের নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করছে, তেমনি “মব লিঞ্চিং” শব্দটির রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তাও দিচ্ছে। আইনজ্ঞরা মনে করছেন, আদালত এই রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল বিচারালয় ন্যায়ের স্থান, রাজনীতির নয়।

এছাড়া আদালত রাজ্যগুলিকে মনে করিয়ে দেয় যে, ২০১৮ সালের Tehseen Poonawalla মামলার নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যে গণপিটুনি প্রতিরোধে বিশেষ পুলিশ টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছে, তা যেন যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়। রায় ঘোষণার পরে জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা এই বিষয়ে নতুন আইনি পথ বিবেচনা করবে।

অন্যদিকে, নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত আইনি স্বচ্ছতার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে। শেষ পর্যন্ত, সুপ্রিম কোর্টের বার্তা স্পষ্ট  আইনের শাসনই সর্বোচ্চ, এবং প্রতিটি ঘটনার জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব কেবল তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই, দল বা ধর্মের ভিত্তিতে নয়।