নয়াদিল্লি: ডিজিটাল অ্যারেস্ট বা অনলাইন প্রতারণার ক্রমবর্ধমান জালিয়াতি নিয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এই অপরাধগুলির মাত্রা ও জটিলতা বিবেচনা করে, সমস্ত ডিজিটাল অ্যারেস্ট মামলার তদন্ত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-কে দেওয়ার ব্যাপারে আদালত ইতিবাচকভাবে ভাবছে।
বিচারপতি সুর্যকান্ত এবং জয়মাল্য বাগচী-র বেঞ্চে এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। আদালত জানায়, “এই ধরনের প্রতারণা সারা দেশে এক ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যভিত্তিক তদন্তের সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধীদের ধরতে দেরি হচ্ছে। তাই সমন্বিত একটি জাতীয় তদন্ত প্রয়োজন।”
কুকুর সমস্যায় রাজ্য ব্যর্থ, সুপ্রিম কোর্টের কড়া হুঁশিয়ারি
সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন তারা তাদের রাজ্যে ডিজিটাল অ্যারেস্ট সংক্রান্ত সমস্ত এফআইআর (FIR)-এর বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দেয়। আগামী ৩ নভেম্বর এই বিষয়ে আদালতের নিজস্ব (suo motu) মামলা পুনরায় শুনানি হবে।
এই মামলার সূত্রপাত এক প্রবীণ মহিলার অভিযোগ থেকে। তিনি জানান, নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া এক প্রতারক তাঁকে ফোনে হুমকি দেয় যে, তিনি এক “অপরাধমূলক কেসে” জড়িত এবং তাকে অবিলম্বে ভিডিও কলে “গ্রেফতার” করা হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে ওই প্রতারকরা তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নেয়। এই অভিযোগের পরই আদালত পুরো ঘটনাকে জনস্বার্থে তদন্তের আওতায় আনে।
সিবিআই-এর পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেন, “এই ধরনের অপরাধ এখন সীমান্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, অনেক ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণার মূল শিকড় মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মতো বিদেশি অঞ্চলে।” তিনি আরও জানান, “এই চক্রগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতের নাগরিকদের টার্গেট করছে, ফলে রাজ্য পুলিশের পক্ষে এককভাবে এগুলি মোকাবিলা করা কঠিন।”
আদালত তাই সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন দ্রুত একটি সমন্বিত জাতীয় তদন্ত পরিকল্পনা (national investigation plan) তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করে। এই পরিকল্পনায় সীমান্ত পারাপারের সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত নজরদারি ও অভিযোগ নিষ্পত্তির নতুন কাঠামোর প্রস্তাব রাখতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। কারণ, গত এক বছরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ প্রতারণা ভারতের সাইবার অপরাধের অন্যতম ভয়াবহ রূপে পরিণত হয়েছে।
প্রতারকরা সাধারণত ভুয়ো পুলিশ বা সিবিআই অফিসারের পরিচয়ে ফোন করে বলেন, “আপনার নামে মামলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, এখনই ভিডিও কলে যুক্ত হন।” পরে ভয় দেখিয়ে বা ব্ল্যাকমেল করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।
এ পর্যন্ত এমন হাজার হাজার অভিযোগ বিভিন্ন রাজ্যে নথিভুক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশে এফআইআর-এর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত হলে চক্রের মূল গডফাদারদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। তবে একই সঙ্গে তারা সতর্কও করেছেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য শুধুমাত্র সিবিআই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ডিজিটাল সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।


