“পরাজিত দুর্নীতির জোট” বলে বিজেপিকে কটাক্ষ স্ট্যালিনের

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন (stalin) শনিবার বিজেপি এবং এআইএডিএমকে-র নবগঠিত জোটকে “পরাজিত দুর্নীতির জোট” হিসেবে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, উভয় দল ক্ষমতার লোভে…

stalin slams BJP

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন (stalin) শনিবার বিজেপি এবং এআইএডিএমকে-র নবগঠিত জোটকে “পরাজিত দুর্নীতির জোট” হিসেবে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, উভয় দল ক্ষমতার লোভে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনকে বন্ধক রেখেছে।

স্ট্যালিনের (stalin) এই মন্তব্য এসেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের চেন্নাই সফরের একদিন পর, যেখানে তিনি ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপি-এআইএডিএমকে জোটের পুনর্গঠনের ঘোষণা করেন। প্রায় দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, বিজেপি নেতা কে

অন্নামালাইয়ের প্রাক্তন এআইএডিএমকে নেতা জে জয়ললিতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে এই দুই দলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল। এক বিবৃতিতে স্ট্যালিন (stalin) বলেন, “এআইএডিএমকে-বিজেপি জোট ব্যর্থতার জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত। তামিলনাড়ুর জনগণ বারবার এই জোটকে পরাজিত করেছে। এখন অমিত শাহ সেই ব্যর্থ জোটকে পুনর্গঠন করেছেন।” তিনি এই জোটের আদর্শগত স্পষ্টতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, শাহ এই জোটের ভিত্তি কী, তা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

স্ট্যালিন (stalin) আরও বলেন

স্ট্যালিন আরও বলেন, “এআইএডিএমকে দাবি করে তারা নিট, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া, ত্রিভাষিক নীতি এবং ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে। তারা বলে, নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব কমানো উচিত নয়। এই সবই কি তাদের ‘সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি’র অংশ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। তিনি এআইএডিএমকে নেতৃত্বকেও কথা বলতে দেননি। বরং, সংবাদ সম্মেলনটি শুধু ডিএমকে, ডিএমকে সরকার এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করতে ব্যবহার করেছেন।”

নিট ও দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন

নিট নিয়ে বিতর্কে স্ট্যালিন বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) পাঁচটি রাজ্যে নিট কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে, যেখানে ছাত্র এবং অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “সিবিআই কার নিয়ন্ত্রণে? শাহ প্রথমে এই বিষয়ে তদন্ত করুন, তারপর বলুন নিট বিরোধিতা বিভ্রান্তি না চিকিৎসা শিক্ষা রক্ষার প্রকৃত প্রচেষ্টা।”

স্ট্যালিন এআইএডিএমকে-র দুর্নীতির ইতিহাসের উল্লেখ করে বলেন, “প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে দুর্নীতির অভিযোগে দুবার পদত্যাগ করতে হয়েছিল। সম্পত্তি কেলেঙ্কারির মামলায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। এমন একটি দলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি কীভাবে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে পারে?” তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত থেকে বাঁচতে এআইএডিএমকে-র অনেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য দাঙ্গা ছড়াবেন না: মমতা

মণিপুর বনাম তামিলনাড়ু: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিতর্ক

শাহ তামিলনাড়ুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করায় স্ট্যালিন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তামিলনাড়ুর আইনশৃঙ্খলা খারাপ হয়েছে বলা নিন্দনীয়। এটা মণিপুর নয়, এটা তামিলনাড়ু। বিজেপি যে রাজ্যে শাসন করছে, সেখানে গত ১৮ মাসে ২৫০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন শান্তিপূর্ণ তামিলনাড়ুতে অশান্তি সৃষ্টি করতে চান।”

Advertisements

রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে উদ্বেগ

স্ট্যালিন অভিযোগ করেন, এআইএডিএমকে তামিলনাড়ুর স্বায়ত্তশাসন কেন্দ্রের কাছে সমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, “বিজেপি নেতৃত্বের পরিকল্পনা হল হিন্দি চাপিয়ে তামিল ভাষাকে নির্মূল করা, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তামিল জনগণের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করা এবং নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। এআইএডিএমকে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দাসের মতো সমর্পণ করেছে, এখন হুমকির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে।”

জোটের ঘোষণা ও প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার চেন্নাইয়ে অমিত শাহ ঘোষণা করেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এডাপ্পাড়ি কে পালানিস্বামী (ইপিএস)-এর নেতৃত্বে লড়া হবে। তিনি বলেন, “জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এবং রাজ্যে এডাপ্পাড়ি পালানিস্বামীর নেতৃত্বে এই নির্বাচন লড়া হবে।” ১৯৯৮ সালের জোটের কথা স্মরণ করে, যখন এআইএডিএমকে-বিজেপি জোট তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩০টি জিতেছিল, শাহ আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন যে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরবে।

শাহ অন্নামালাইয়ের অপসারণ জোটের শর্ত ছিল বলে গুজবকে উড়িয়ে দেন এবং বলেন, বিজেপি এআইএডিএমকে-র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। এদিকে, ইপিএস এই জোটকে “তামিলনাড়ুর অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে” গঠিত বলে বর্ণনা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির “অটল সমর্থন” এর প্রশংসা করে বলেন, এই জোট তামিলনাড়ুর উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

রাজনৈতিক তাৎপর্য

এই জোট পুনর্গঠন তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে-র মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে স্ট্যালিনের এই তীব্র সমালোচনা আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে তুলবে। এআইএডিএমকে-বিজেপি জোট কতটা জনগণের সমর্থন পায় এবং ডিএমকে-র বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তা ২০২৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

স্ট্যালিনের বক্তব্যে তামিল জাতীয়তাবাদ, স্বায়ত্তশাসন এবং দুর্নীতির বিষয়গুলি উঠে এসেছে, যা তামিলনাড়ুর জনগণের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, বিজেপি এবং এআইএডিএমকে তাদের জোটকে উন্নয়ন ও শাসনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে উপস্থাপন করছে। আগামী দিনে এই রাজনৈতিক লড়াই কীভাবে এগোয়, তা তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।