আমেরিকার সোশ্যাল সিকিউরিটি বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক চার্লস বোর্গেস সম্প্রতি একটি বড়সড় অভিযোগ তুলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বোর্গেসের দাবি, ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE)-এর একাধিক আধিকারিক দেশের প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য ভুলভাবে পরিচালনা করেছে। এর ফলে মার্কিন নাগরিকদের সোশ্যাল সিকিউরিটি ডেটা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
চার্লস বোর্গেস ছিলেন সংস্থার চিফ ডেটা অফিসার। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, DOGE-এর কিছু আধিকারিক আমেরিকান নাগরিকদের সোশ্যাল সিকিউরিটি সম্পর্কিত নথি এমন এক ক্লাউড অ্যাকাউন্টে আপলোড করেছিলেন, যা সরকারের কোনো নিরীক্ষা বা সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় পড়ে না। এই পদক্ষেপে বিপুল সংখ্যক নাগরিকের আর্থিক ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বোর্গেস এই তথ্য বিশেষ কউন্সেল অফিসে লিখিত আকারে জমা দিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ জানানোর পর থেকেই তিনি নানা ধরণের চাপ ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে অভিযোগ। তাঁর দাবি, দপ্তরের ভেতরে তাঁকে একাধিক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, তিনি নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হুইসলব্লোয়ারদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ আইন চালু রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় দেখা যায়, অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও পেশাগত চাপ সৃষ্টি করা হয়। বোর্গেসের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে বলে তিনি মনে করছেন।
এই ঘটনার ফলে আমেরিকার রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজে এক নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, যদি সত্যিই প্রায় ৩০ কোটি নাগরিকের তথ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকে, তবে তা শুধু নাগরিকদের ব্যক্তিগত ক্ষতি করবে না, বরং দেশের আর্থিক ও সাইবার নিরাপত্তার উপরও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
বোর্গেসের পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসতেই একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও তথ্য নিরাপত্তা কর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের দাবি, সরকারের উচিত দ্রুত তদন্ত শুরু করা এবং দায়ী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি, যারা সত্য উন্মোচন করেন তাঁদের হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্য আরও শক্তিশালী আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে মার্কিন প্রশাসনের তরফে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, হোয়াইট হাউস ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।
চার্লস বোর্গেসের পদত্যাগ আমেরিকার প্রশাসনিক মহলে এক বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল— নাগরিকদের তথ্য কি সত্যিই সুরক্ষিত? নাকি সরকারি দপ্তরের অব্যবস্থাপনা সেই তথ্যকে প্রতিদিন বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে?