নয়াদিল্লি: ভারতের ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে গাজা সংকটে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্লিপ্ত আচরণকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সোমবার দৈনিক জাগরণ-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘লজ্জাজনক নীরবতা’-কে ‘কাপুরুষোচিত বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে আখ্যা দেন।
অশান্ত গাজা
সোনিয়া লিখেছেন, “আজ যখন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ গাজায় নিষ্ঠুরতার শিকার, তখন ভারতের এই নীরবতা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি এক গভীর নৈতিক বিপর্যয়।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত প্রথম অ-আরব দেশ হিসেবে প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং ১৯৮৮ সালে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ভারত। “আজ সেই উত্তরাধিকারই লাঞ্ছিত,” বলেন তিনি।
‘গণহত্যার সামিল, বর্বর ও অপরাধমূলক’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামরিক প্রতিক্রিয়াকে সোনিয়া গান্ধী সরাসরি “গণহত্যার মতো” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই হিংস্রতা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গাজার সমাজ কাঠামোকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র।”
গান্ধীর ভাষায়, “খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করে গাজাবাসীদের উপর পরিকল্পিত অনাহার চাপানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্পষ্টতই অপরাধ।”
আন্তর্জাতিক চাপে ভেঙে পড়ছে নৈতিক কাঠামো, ভারতের ভূমিকা কোথায়?
সোনিয়া লেখেন, “জাতিসংঘের সাধারণ সভা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নির্দেশ কার্যত উপেক্ষিত। গাজার পক্ষে এখন একেকটি দেশকে নিজ উদ্যোগে আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে, ফ্রান্স প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কানাডা ও ব্রিটেন নেতানিয়াহুর সরকারকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারত কি আর সেই নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারবে না, যে নেতৃত্ব এক সময় বিশ্বকে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছিল?”
‘নিরাপত্তা নয়, ভূসম্পত্তি লালসা’ সোনিয়ার কটাক্ষ
ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন সোনিয়া। তিনি বলেন, “এই নৃশংসতার পেছনে রয়েছে ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং কিছু লোভী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর স্বার্থ, যারা গাজা উপত্যকাকে পর্যটননগরীতে পরিণত করতে চায়।”
তিনি এই প্রসঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেন, যেখানে ভবিষ্যতের গাজাকে ‘রিসর্ট সিটি’ করার পরিকল্পনার আভাস ছিল।
ভারতের নৈতিক দায় ও সংবিধানিক দায়িত্ব
সোনিয়া গান্ধী বলেন, “ভারতের সংবিধানের নির্দেশমূলক নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আজ সেই আদর্শ উপেক্ষিত।”
তিনি সংযোজন করেন, “যখন শিশুরা মরছে, পরিবার নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, তখন ভারতের নীরবতা আমাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা।”
এক উত্তরাধিকারের দাবি
সোনিয়া গান্ধীর নিবন্ধ একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং এক ঐতিহাসিক ও নৈতিক আহ্বান। তিনি লিখেছেন, “ভারত একদিন ছিল বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের প্রতীক। আজ আমরা কি সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাব? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।”