বেঙ্গালুরু, ১৬ সেপ্টেম্বর: কর্ণাটক সরকার আপার কৃষ্ণা প্রকল্প -৩ (ইউকেপি-৩)-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া মঙ্গলবার একটি বিশেষ ক্যাবিনেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা গত ক্যাবিনেট সভায় অসমাপ্ত ছিল।
এই সভা ছিল শুধু মাত্র জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসনের উপর ভিত্তি করে।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের দাবি পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারবেন, যা রাজ্যের কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া জানিয়েছেন, আলমাট্টি বাঁধের উচ্চতা ৫১৯.৬ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৫২৪.২৫৬ মিটার করা হবে, যার ফলে ৭৫,০০০ একরেরও বেশি জমি রক্ষা করা যাবে।
এই প্রকল্পটি পাঁচ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি জমিতে সেচ ব্যবস্থা প্রদান করবে, যা সমপরিমাণ ১২-১৩ লক্ষ একরের সমান। এটি অঞ্চলের কৃষকদের জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে। কৃষক নেতা, স্থানীয় প্রতিনিধি এবং বিজেপি সহ সকল স্টেকহোল্ডাররা সেচযুক্ত জমির জন্য প্রতি একরে কমপক্ষে ৪০ লক্ষ টাকা এবং শুষ্ক জমির জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছিলেন।
ক্যাবিনেট এই দাবিগুলি পূর্ণভাবে মেনে নিয়ে সেচযুক্ত জমির জন্য ৪০ লক্ষ টাকা এবং শুষ্ক জমির জন্য ৩০ লক্ষ টাকা প্রতি একরে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেছে।উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার বলেছেন, সরকার সকল সিদ্ধান্ত ভূমি অধিগ্রহণ আইনের অধীনে কার্যকর করবে। “যেখানে বিষয়টি আদালতে আটকে আছে, সেখানে মধ্যস্থতা আইন প্রয়োগ করা হবে।
যেখানে পুনর্বাসন প্রয়োজন, সেখানে আমরা নতুন নীতি প্রণয়ন করছি। কর্ণাটক সরকার প্রথমবারের মতো একটি ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং পুনর্বসতি কর্তৃপক্ষ গঠন করবে,” তিনি বলেন। শিবকুমার আরও জানান, সেচ খাল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় খালের জমির জন্য ক্ষতিপূরণের হার ভিন্ন হবে। ৫১,০০০ একরের মধ্যে ২৩,৬৩১ একর ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
নিমজ্জিত জমির জন্য আলাদা হার নির্ধারিত হবে এবং এই নীতি কৃষ্ণ ভাগ্য জল নিগমের অধীনে আলমাট্টি বাঁধসহ এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। শিব কুমার বলেন “নিমজ্জিত জমির জন্য সেচযুক্ত জমিতে ৪০ লক্ষ টাকা এবং শুষ্ক জমিতে ৩০ লক্ষ টাকা প্রতি একরে। জমি অধিগ্রহণে ৭০,০০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে। আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করছি এবং শীঘ্রই বিস্তারিত জানাব,”।
ক্যাবিনেট নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরবর্তী তিনটি অর্থবছরের মধ্যে জমির মালিকদের সম্মতি অর্ডার নিশ্চিত করার দায়িত্ব দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন, উল্লেখ করে যে পূর্ববর্তী সরকার ২০-২৫ লক্ষ টাকা প্রতি একরে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু তা কখনো কার্যকর হয়নি।
তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে, ২০১৩ সালের বৃজেশ কুমার ট্রাইব্যুনালের পুরস্কারটি অবিলম্বে প্রদান করা হোক, যাতে বিষয়টিতে স্পষ্টতা আসে। আপার কৃষ্ণা প্রকল্প কর্ণাটকের উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের একটি মাইলফলক। এই প্রকল্পটি কৃষ্ণা নদের জলসম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে বায়চুন, বিজয়পুর, গদাগ, বাগলকোটসহ বিভিন্ন জেলায় সেচ সুবিধা প্রসারিত করবে।
প্রকল্পের ফলে লক্ষ লক্ষ কৃষক পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। তবে, জমি নিমজ্জনের কারণে কৃষকদের অসন্তোষ এবং আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের অসম্পূর্ণ পরিকল্পনা কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছিল, কিন্তু বর্তমান কংগ্রেস সরকার এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে।