HomeBharatজামাত-এ-ইসলামী নেটওয়ার্ক ভাঙতে সোপিয়ানে ব্যাপক পুলিশি অভিযান

জামাত-এ-ইসলামী নেটওয়ার্ক ভাঙতে সোপিয়ানে ব্যাপক পুলিশি অভিযান

- Advertisement -

কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের সোপিয়ান (Shopian) জেলাজুড়ে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। নিষিদ্ধ জঙ্গি-মুখপত্র ও সংগঠন জামাত-এ-ইসলামী (Jamaat-e-Islami)–র সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে বহু স্থানে সমন্বিত ও সুচারু পরিকল্পনার ভিত্তিতে হানা দিচ্ছেন সোপিয়ান পুলিশ। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম, বাজার এলাকা ও নির্জন স্থানে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সোপিয়ানকে কার্যত ঘিরে ফেলে ‘মাল্টিপয়েন্ট কোঅর্ডিনেটেড সার্চ অপারেশন’ চালানো হচ্ছে বলে একটি উচ্চপদস্থ সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যে সব স্থানে তল্লাশি চলছে, সেগুলোর অধিকাংশই পূর্বে জমাত-এ-ইসলামির কর্মী বা সদস্যদের যোগাযোগস্থল হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ২০১৯ সালে ভারত সরকার জমাত-এ-ইসলামিকে UAPA–র আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অভিযোগ, সংগঠনটি উপত্যকার জঙ্গিবাদকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করা, চরমপন্থা ছড়ানো এবং অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এরপর থেকেই কাশ্মীর পুলিশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স শাখা ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি সংগঠনটির প্রভাবশালী বিভাগগুলোকে চিহ্নিত করতে শুরু করে। সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সোপিয়ানের মধ্যে কিছু নিষিদ্ধ সদস্য আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই আজকের অভিযান শুরু হয়েছে।

   

আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ প্রথম হানা শুরু হয় সোপিয়ান শহরের উপকণ্ঠে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ভোরে রাস্তায় হঠাৎই পুলিশ ও CRPF-র বহর ঢুকে পড়ে। জওয়ানরা কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং বাইরে বেরোতে নিষেধ করেন সাধারণ মানুষকে। এরপরই বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি শুরু হয়। এমন দৃশ্য সোপিয়ানের বিভিন্ন গ্রাম—জামনাগাড়, ইমাম সাহেব, হেরপোরা, কেলার, বারবুক, মিনিপুর, ভেহিল—থেকে পাওয়া গেছে। কোথাও সাধারণ পোশাকে পুলিশ, কোথাও আবার পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারে বিশেষ দল তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, আজকের অভিযান ‘specific intelligence-based operation’, অর্থাৎ একদম নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তল্লাশি চলছে এমন সমস্ত স্থানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা অতীতে JeI-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি সংগঠনের আর্থিক নেটওয়ার্ক ও নতুন মডিউল গঠনের চেষ্টা নিয়ে গোয়েন্দাদের হাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। এমনকি পাকিস্তানের কিছু সন্ত্রাস-মদতকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে JeI-র পুরনো মডিউলের নবজাগরণের চেষ্টা নিয়েও তথ্য পাওয়া গেছে।

জমাত-এ-ইসলামির নিষিদ্ধকরণের পর সংগঠনের বহু নথি, যোগাযোগ মাধ্যম, ডিজিটাল ডকুমেন্ট, আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড গোপনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ। আজকের অভিযানের লক্ষ্য হল সেই নথিগুলি উদ্ধার করা, যেখান থেকে সংগঠনের নতুন করে সক্রিয় হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে ডোনেশন ট্র্যাকিং, বিদেশি ফান্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, হাওলা চেইন—এসবের খোঁজে পুলিশ আজ ঘর-ঘর তল্লাশি চালাচ্ছে। কয়েকটি বাড়িতে ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ ও ডকুমেন্ট জব্দ করার খবরও মেলেছে।

অভিযানের সময় কোনও বড় গোলমাল বা সংঘর্ষের খবর এখনও পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের অসুবিধা যাতে না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে। তল্লাশি শুরু হওয়ার সময় অনেক জায়গায় মানুষকে বাড়ির ভিতর থাকতে বলা হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে অভিযানের গোপনীয়তা বজায় থাকে এবং লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তি পালাতে না পারে।

সোপিয়ান পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানান, “আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার—জমাত-এ-ইসলামির নিষিদ্ধ কাঠামো যাতে কোনওভাবেই পুনরুজ্জীবিত না হতে পারে, এবং উপত্যকা আবারও পুরনো চক্রে না ঢোকে। এটি একটি প্রতিরোধমূলক অভিযান।” তিনি আরও বলেন, “নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পরই আজকের সমন্বিত তল্লাশি চালানো হয়েছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হাতে এসেছে, যা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

কাশ্মীরের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা কমলেও স্লিপার সেল সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েই গেছে। জমাত-এ-ইসলামির একাধিক পুরনো কর্মী অর্থ সংগ্রহ, সামাজিক পরিসরে প্রভাব বিস্তার এবং জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছে বলে বারবার রিপোর্টে উঠে এসেছে। তাই পুলিশের আজকের অভিযানকে তারা “প্রয়োজনীয় এবং সঠিক সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ” বলে মনে করছেন।

স্থানীয় মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “নিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি”, আবার অনেকে হঠাৎ তল্লাশি দেখে আতঙ্কিতও হয়েছেন। তবে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে—নির্দোষ লোকজনকে কোনওভাবেই হেনস্থা করা হবে না, এবং সমস্ত পদক্ষেপ আইনসম্মত পদ্ধতিতেই হচ্ছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শোপিয়ান পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আরও কয়েকটি স্থানে তল্লাশি বাড়ানো হতে পারে বলে সূত্রের দাবি। আজকের সমন্বিত অভিযানের ফলাফল আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular