মহারাষ্ট্রে উৎসবের আমেজ, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় শিবাজীর ১২ দুর্গ

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস, উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে মহাযুতি জোটের নেতারা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের ১২টি দুর্গের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির…

Maharashtra shivaji world heritage site

মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস, উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে মহাযুতি জোটের নেতারা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের ১২টি দুর্গের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য উৎসব উদযাপন করেছেন। এই ঐতিহাসিক স্বীকৃতি মহারাষ্ট্র তথা সমগ্র ভারতের জন্য এক গৌরবময় মুহূর্ত।

এই দুর্গগুলির মধ্যে রয়েছে রায়গড়, প্রতাপগড়, পানহালা, শিবনেরি, লোহগড়, সালহের, সিন্ধুদুর্গ, সুবর্ণদুর্গ, বিজয়দুর্গ, খান্ডেরি, এবং তামিলনাড়ুর জিঞ্জি দুর্গ। এই স্বীকৃতি মারাঠা সাম্রাজ্যের সামরিক কৌশল, স্থাপত্যশৈলী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী সম্মান প্রকাশ করে।

   

১১ জুলাই, ২০২৫-এ প্যারিসে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৭তম অধিবেশনে ‘মারাঠা মিলিটারি ল্যান্ডস্কেপস’ নামে এই ১২টি দুর্গকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি ভারতের ৪৪তম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী (Maharashtra) দেবেন্দ্র ফড়নবিস এই ঘটনাকে “গৌরবময় ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত” হিসেবে অভিহিত করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন।

“মহারাষ্ট্র (Maharashtra) সরকার আমাদের প্রিয় ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে শ্রদ্ধা জানায়। এই ১২টি দুর্গ স্বরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য নির্মিত হয়েছিল, এবং এটি সমগ্র মহারাষ্ট্রবাসী ও শিবভক্তদের জন্য গর্বের বিষয়।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষনকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

এই দুর্গগুলি মারাঠা সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি ও স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। শিবনেরি দুর্গ, যেখানে শিবাজি মহারাজের জন্ম হয়েছিল, এবং রায়গড়, যেটি মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল, ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতাপগড় দুর্গ ১৬৫৯ সালের বিখ্যাত প্রতাপগড়ের যুদ্ধের জন্য পরিচিত, যেখানে শিবাজি মহারাজ আফজল খানকে পরাজিত করেছিলেন।

সিন্ধুদুর্গ এবং সুবর্ণদুর্গের মতো দ্বীপ দুর্গগুলি মারাঠা নৌবাহিনীর শক্তি ও সমুদ্রতীর রণকৌশলের প্রতীক। পানহালা, বিজয়দুর্গ, লোহগড়, সালহের, খান্ডেরি এবং রাজগড়ও বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে মারাঠাদের সামরিক কৌশলের প্রমাণ বহন করে। তামিলনাড়ুর জিঞ্জি দুর্গ মারাঠা সাম্রাজ্যের বিস্তৃত প্রভাবের সাক্ষ্য দেয়।

উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেন, (Maharashtra) “এই দুর্গগুলি শিবাজি মহারাজের স্বরাজ্যের স্বপ্নের প্রতীক। এই স্বীকৃতি তাঁর উজ্জ্বল ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবে।” অজিত পাওয়ারও এই ঘটনাকে “ঐতিহাসিক ও গর্বের মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, এই দুর্গগুলি বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষকে একত্রিত করে শিবাজি মহারাজের ‘হিন্দবী স্বরাজ্য’ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

Advertisements

মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আশিস শেলারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্যারিসে গিয়ে এই মনোনয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। শেলার বলেন, “এই স্বীকৃতি মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও পর্যটন বৃদ্ধির জন্য নতুন পথ খুলবে।” ইউনেস্কোর নিয়ম অনুযায়ী, এই দুর্গগুলির সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতকে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

এই দুর্গগুলির মধ্যে আটটি (Maharashtra) শিবনেরি, লোহগড়, রায়গড়, সুবর্ণদুর্গ, পানহালা, বিজয়দুর্গ, সিন্ধুদুর্গ এবং জিঞ্জি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধীনে সংরক্ষিত, বাকি চারটি মহারাষ্ট্র সরকারের পুরাতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তর দ্বারা রক্ষণাবেক্ষিত। এই স্বীকৃতি দুর্গগুলির সংরক্ষণে নতুন উদ্যম আনবে এবং পর্যটকদের কাছে মারাঠা ইতিহাসের গৌরব তুলে ধরবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই স্বীকৃতিকে “প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য আনন্দের মুহূর্ত” বলে উল্লেখ করে বলেন, “মারাঠা সাম্রাজ্য শুধু সামরিক শক্তিই নয়, সুশাসন, সাংস্কৃতিক গর্ব এবং সামাজিক কল্যাণের প্রতীক।” তিনি সকলকে এই দুর্গগুলি পরিদর্শন করে মারাঠা ইতিহাস সম্পর্কে জানার আহ্বান জানান।

মহারাষ্ট্রের পর্বতারোহী সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি হৃষিকেশ যাদব বলেন, “ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্তি দুর্গগুলির সংরক্ষণে নতুন দিশা দেবে।” তিনি জানান, তাঁরা ইউনেস্কোর কাছে দুর্গগুলির মডেল উপস্থাপন করেছিলেন, যা তাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও স্থাপত্যশৈলী তুলে ধরতে সাহায্য করেছে।

দেশভাগের নেপথ্যে কমিউনিস্ট পার্টি, প্রমাণ দিলেন চন্দ্রচূড়

এই স্বীকৃতি মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার পাশাপাশি পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।