ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় শেহবাজ শরীফের সমর্থন, পাকিস্তানে নয়া বিতর্কের সৃষ্টি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের (Shehbaz Sharif) ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রস্তাবের সমর্থন দেশে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ শেষ…

Shehbaz Sharif Faces Political Backlash Over Support for Trump's Gaza Proposal

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের (Shehbaz Sharif) ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রস্তাবের সমর্থন দেশে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তিনি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য ২০ পয়েন্টের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের অবস্থান, যা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে, তার সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের বড় অমিল রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শেহবাজ শরীফের এই পদক্ষেপটি দেশটির ফিলিস্তিনের প্রতি ঐতিহ্যগত সহানুভূতি ও সমর্থন থেকে একটি স্পষ্ট বিচ্যুতি।

Advertisements

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান দুই বছরের যুদ্ধের পর, ট্রাম্পের প্রস্তাবটি একটি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেহবাজ শরীফের এই সমর্থন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনা হতে পারে, যা দেশের জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে, এবং এর সঙ্গে এই ধরনের পরিবর্তন দেশটির জনগণের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।

   

ফরেন মিনিস্টার ও ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ইশকাক দারও শেহবাজ শরীফের এই সমর্থন থেকে নিজেদের আলাদা করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ট্রাম্পের প্রস্তাবটি পাকিস্তানের কৌশলগত নীতি অনুযায়ী নয় এবং এটি “আমাদের ডকুমেন্ট নয়”। এর মাধ্যমে ইশকাক দার নিশ্চিত করেছেন যে, এই প্রস্তাবটি পাকিস্তানের সরকারী নীতি বা অবস্থানের প্রতিফলন নয়।

শেহবাজ শরীফের সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। শত শত টুইট, ফেসবুক পোস্ট ও মন্তব্যে দেশের জনগণ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তান ফিলিস্তিনের প্রতি যেভাবে সহানুভূতিশীল ছিল, শেহবাজ শরীফের এই সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না এবং এটি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি শেহবাজ শরীফের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন একটি স্পর্শকাতর বিষয়।

পাকিস্তানে শেহবাজ শরীফের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুধু বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সরকারের অঙ্গীকারের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন), শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে থাকা সত্ত্বেও, এই পরিকল্পনার সমর্থনে শীর্ষ নেতা ও কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করেছেন। এতে মনে হচ্ছে, দলের মধ্যে একটি মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবটি অনেকের কাছে প্রস্তাবিত সমাধান হিসাবে বিরোধিতার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছেন, তারা এই প্রস্তাবকে তাদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি একটি হুমকি হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্পের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুটি রাষ্ট্রের ধারণার প্রবর্তন—যা অনেকেই মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ক্ষতি করতে পারে।

পাকিস্তানের জনগণ ও রাজনৈতিক মহলের মধ্যে এই বিতর্কের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। শেহবাজ শরীফের সমর্থনে এই প্রস্তাব পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি একটি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, যা সামনের দিনগুলোতে দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে পাকিস্তানের ঐতিহ্যগত অবস্থান পরিবর্তন হলে, সেটি দেশের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে, যা আগামীতে সরকারের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।