মণিপুরের (Manipur) বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সপ্তাহব্যাপী যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, সন্ত্রাসী যন্ত্রাংশ এবং যুদ্ধের সামগ্রী উদ্ধার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, মণিপুর পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রাণালয়ের বরাত দিয়ে জানা গেছে, অভিযানে ২৯টি অস্ত্র, একটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED), গোলাবারুদ এবং অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এই উদ্ধার অভিযানটি ছিল মণিপুরের পাহাড়ি ও উপত্যকা এলাকায়, যা ইম্ফল পশ্চিম, চুরাচাঁদপুর, কাংপোকপি, বিশ্নুপুর, তেংনৌপাল এবং কাকচিং জেলার বিভিন্ন অংশে পরিচালিত হয়।
এনডিএমডিএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে তেংনৌপাল জেলার সামুকম গ্রামে অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকার বিষয়ে বিশেষ তথ্য পেয়ে আসাম রাইফেলস এবং মণিপুর পুলিশ একটি যৌথ অভিযানে অংশগ্রহণ করে। তাদের উদ্ধার অভিযানে দুটি বড় পম্পি গান, গ্রেনেড, ইডি (IED), বিস্ফোরক সামগ্রী, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য যুদ্ধের সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও, ৮ নভেম্বর ইম্ফল পশ্চিম জেলার থিংগোম এলাকায় আসাম রাইফেলস একটি ৯ মিমি কার্বাইন মেশিন গান, একটি গ্রেনেড লঞ্চার, ৯ মিমি পিস্তল, গ্রেনেড এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করে। ৯ নভেম্বর, চুরাচাঁদপুর জেলার সাঙ্গাইকোটের ল খোনমফাই গ্রাম এবং কাংপোকপি জেলার এস চৌংগৌবাং ও মাোহিং অঞ্চলে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে একটি .২২ রাইফেল, দুটি পিস্তল, ছয়টি ১২ বোর একক বোর রাইফেল, একটি .২২ রাইফেল, দুটি ইমপ্রোভাইজড প্রক্জেকটাইল লঞ্চার, গ্রেনেড এবং অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী ছিল।
১০ নভেম্বর, কাকচিং জেলার উতংপোকপি এলাকার একটি গোয়েন্দা ভিত্তিক অভিযানে এক .২২ রাইফেল, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী উদ্ধার করেছে একটি যৌথ দল, যাতে আসাম রাইফেলস, মণিপুর পুলিশ এবং বিএসএফ অংশগ্রহণ করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া সমস্ত সামগ্রী মণিপুর পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে তদন্ত এবং নিষ্পত্তির জন্য। এই অভিযানে উদ্ধার হওয়া যুদ্ধসামগ্রী নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য এবং এটি ভারতীয় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একত্রে কাজ করার শক্তিশালী প্রদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
মণিপুরে এই ধরনের যৌথ অভিযান এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা এলাকায় নিরাপত্তা বজায় রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মণিপুরে জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশেষভাবে সঙ্কটপূর্ণ থাকায় এসব অভিযান সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
গত কয়েক বছরে মণিপুরে অস্ত্রের উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে, যা স্থানীয় জনগণের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মণিপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এর ফলে মণিপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এসব অভিযানে সাফল্য স্থানীয় জনগণের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর এই সাফল্যের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। মণিপুরে এই ধরনের অভিযানগুলি পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।