দেশে বাজারে আসা প্রতিটি নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেটে সঞ্চার সাথী অ্যাপ প্রি-ইনস্টল বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র সরকার “জাতীয় নিরাপত্তার অবশ্যম্ভাবী পদক্ষেপ” হিসেবে তুলে ধরছে। সরকারের দাবি, ডুপ্লিকেট, টেম্পার্ড বা স্পুফড IMEI নম্বরের ভয়াবহ বৃদ্ধি এখন সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত তদন্ত থেকে শুরু করে সাইবার অপরাধ রুখতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেআইনি, চুরি যাওয়া বা ব্ল্যাকলিস্টেড ফোনের অনায়াস রিসেল—এ সব মিলিয়ে ক্রমবর্ধমান দ্বিতীয়হাত ফোনের বাজারও পরিণত হয়েছে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগে। এই বাস্তবতায় সঞ্চার সাথী-কে কেন্দ্র দেখছে একটি কেন্দ্রীভূত যাচাই-ব্যবস্থা, যা ফোন ট্রেসিং-এ নির্ভরযোগ্যতা ও গতিশীলতা বাড়াবে।
বিশৃঙ্খলা রোধের হাতিয়ার
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, অসৎভাবে বদলে দেওয়া IMEI নম্বরের কারণে একই ফোন একাধিক স্থানে নেটওয়ার্কে ধরা পড়তে পারে—ফলে তদন্তের দিশা ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। অপরাধীরা এই সুযোগে ট্র্যাকিং এড়িয়ে যায়, অন্যদিকে অজান্তে চুরি যাওয়া ফোন কিনে বসেন সাধারণ ব্যবহারকারী, যা তাঁদেরকেই টেনে আনে আইনি ঝুঁকিতে। কেন্দ্রের যুক্তি—সঞ্চার সাথী এই বিশৃঙ্খলা রোধের হাতিয়ার; এটি IMEI যাচাই, চুরি যাওয়া ফোন ব্লক এবং সাইবার অপব্যবহার প্রতিরোধের মাধ্যমে একটি নিরাপদ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলে। সরকারের দৃঢ় অবস্থান, এই উদ্যোগ “নজরদারি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ নয়—এটি একান্তই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।”
যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধী দলগুলি Sanchar Saathi Pre-install app Controversy
শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর তোপ—এই নির্দেশিকা যেন “BIG BOSS surveillance moment।” তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র “গোপনে নাগরিকের ফোনে প্রবেশের সোপান তৈরি করছে”, এবং এই ধরনের প্রযুক্তিগত নজরদারি “তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে।” তিনি আরও বলেন, নাগরিকের অভিযোগ নিষ্পত্তির শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলার বদলে IT মন্ত্রক “নজরদারি ব্যবস্থারই প্রসার ঘটাতে ব্যস্ত।”
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালও নির্দেশিকাকে আখ্যা দিয়েছেন “চরম অসাংবিধানিক” বলে। এক্স-এ পোস্ট করে তাঁর সাফ মন্তব্য—“Big Brother cannot watch us।” তাঁর মতে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত একটি মৌলিক অধিকার; সঞ্চার साथी যেন “ডিস্টোপিয়ান একটি যন্ত্র”, যা নাগরিকের “প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি যোগাযোগ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত” পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কংগ্রেসের অভিযোগ—এটি সরকারের “নাগরিক অধিকারের উপর অবিরাম আঘাতের ধারাবাহিকতারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।”
রাষ্ট্রীয় নজরদারির ছায়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসিন পুনাওয়ালা আরও এক ধাপ এগিয়ে সতর্ক করেছেন, প্রি-ইনস্টল ও আনইনস্টল-অযোগ্য অ্যাপ নাগরিকদের ওপর “রাষ্ট্রীয় নজরদারির ছায়া” বিস্তার করতে পারে। তাঁর অভিযোগ, এই উদ্যোগ কার্যত সরকারের হাতে “কল, বার্তা থেকে লোকেশন পর্যন্ত সবকিছু নজরদারির” উপায় তুলে দেবে—একটি কাঠামো যা নাগরিককে “অপরাধীর মতো ট্র্যাক করার” পথ খুলে দেয়।
যদিও কেন্দ্রের দাবি, কোনও ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাপটি সংগ্রহ করে না এবং এর একমাত্র উদ্দেশ্য বেআইনি ডিভাইসের অপব্যবহার ঠেকানো—তবে এই দাবি নিয়েই বিরোধী শিবিরে জোর প্রশ্নচিহ্ন। ফলে প্রযুক্তি-নির্ভর নিয়ন্ত্রণের এই সিদ্ধান্ত আজ পরিণত হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা বনাম ব্যক্তিগত স্বাধীনতার তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কে।
