জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মু (jammu) জেলার নারওয়াল এলাকায় বুধবার তিনটি আরপিজি (রকেট প্রোপেলড গ্রেনেড) শেল পাওয়া গেছে, যা জম্মু (jammu)ও কাশ্মীর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল (বিডিএস) সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পহেলগাঁও নৃশংস হত্যা এবং অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তী সময়ে এই ধরণের যথেষ্ট চাঞ্চল্যকর।
আপাতত এই ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং শেলগুলির উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত এই নারওয়াল জম্মুর শহর এলাকা এবং নারওয়ালেই একটি আন্তর্জাতিক পাঁচ তারা হোটেলের শাখা রয়েছে, যেখানে দেশ বিদেশের বহু নামি দামি মানুষ অতিথি হয়ে আসেন।
ঘটনার বিবরণ
জম্মু (jammu)শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত নারওয়ালের ট্রান্সপোর্ট নগর এলাকায় বুধবার দুপুরের দিকে পুলিশ এই তিনটি আরপিজি শেলের সন্ধান পায়। কর্মকর্তাদের মতে, রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসের কাছে রাস্তার ধারে এই শেলগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং এলাকাটি ঘিরে ফেলে।
নিরাপত্তার স্বার্থে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। বিডিএস দল উচ্চ বিস্ফোরকযুক্ত এই শেলগুলিকে নিরাপদে একটি নির্জন স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে। এই অপারেশনে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ জানিয়েছে, শেলগুলির উৎপত্তি এবং এলাকায় তাদের উপস্থিতির কারণ তদন্ত করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা প্রেক্ষাপট
এই ঘটনা জম্মু (jammu) ও কাশ্মীরে নিরাপত্তার দিক থেকে একটি সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল, যা পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের কাজ বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ৭ মে ভারত অপারেশন সিঁদুর শুরু করে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়।
এই অপারেশনের জবাবে পাকিস্তান সীমান্তে শেলিং এবং ড্রোন হামলার চেষ্টা করে, যার ফলে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ১০ মে দুই দেশ শত্রুতা বন্ধে সমঝোতায় পৌঁছায়, কিন্তু সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী এখনও উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
গত ২৩ মে, জম্মু (jammu)ও কাশ্মীর পুলিশের স্টেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এসআইএ) জম্মু প্রদেশে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভাঙতে চারটি জেলায় ১৮টি স্থানে সমন্বিত অভিযান চালায়। এই অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অপরাধমূলক উপকরণ উদ্ধার করা হয়, যা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এসআইএ-এর এই প্রচেষ্টা স্লিপার সেল এবং সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক নির্মূল করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে তদন্তে যোগদানের জন্য সমন জারি করা হয়েছে, এবং তদন্ত এখনও চলছে।
স্থানীয় প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া (jammu)
নারওয়ালের এই ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা এবং সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। নারওয়াল জম্মু শহরের একটি ব্যস্ত এলাকা, যেখানে ট্রান্সপোর্ট নগর বাণিজ্যিক কার্যকলাপের কেন্দ্র।
এই ধরনের বিস্ফোরক উপকরণের উপস্থিতি এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে, পুলিশ এবং বিডিএস-এর দ্রুত পদক্ষেপ সম্ভাব্য বিপর্যয় রোধ করেছে। স্থানীয়রা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন, যারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এর আগে, জম্মু (jammu) ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানের ছোঁড়া শেল উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করার ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ২০ মে পুঞ্চের দারা বাগিয়াল গ্রামে একটি পাকিস্তানি শেল ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিডিএস দল নিষ্ক্রিয় করে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মাশুক এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, এই শেলগুলি স্থানীয়দের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল, এবং সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ তাদের জীবন রক্ষা করেছে।
পিএসইউ কর্মীদের জন্য পেনশন বিধিতে কড়া পরিবর্তন ঘোষণা কেন্দ্রের
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান
পহেলগাঁও হামলা এবং নারওয়ালে শেল উদ্ধারের ঘটনা পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পহেলগাঁও হামলার জন্য পাকিস্তানের ভূমিকাকে “অস্বীকার্য” বলে অভিহিত করেছেন এবং প্রতিটি জঙ্গি ও তাদের সমর্থকদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারত ইতিমধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস, ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।
নারওয়ালে শেল উদ্ধারের ঘটনা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপের সম্ভাব্য হুমকির কথা মনে করিয়ে দেয়। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এই ধরনের ঘটনার তদন্তে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে।
নারওয়ালে তিনটি আরপিজি শেলের উদ্ধার এবং নিষ্ক্রিয়করণ জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতা এবং দক্ষতার প্রমাণ। এই ঘটনা সীমান্ত এলাকায় চলমান উত্তেজনা এবং সন্ত্রাসী হুমকির গুরুত্ব তুলে ধরে। তদন্তের মাধ্যমে শেলগুলির উৎস এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে সহায়ক হবে।