যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের শাস্তি হাতে নাতে, পেশোয়ারে (peshawar) শুরু হলো ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল শহর। পাকিস্তানের পেশোয়ার শহর শনিবার রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্ভুল ও শক্তিশালী প্রত্যাঘাতের ফলে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে।
যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মার্কিন মধ্যস্থতায় শনিবার বিকেল ৫টা থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধ বিরতি চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়, যার ফলে পেশোয়ারের একাধিক স্থানে বিস্ফোরণের শব্দে শহর কেঁপে ওঠে।
ভারতীয় সেনার জবাব
এই লঙ্ঘনের তাৎক্ষণিক জবাব হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পেশোয়ারের (peshawar) সামরিক স্থাপনা ও সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানে, যা শহর জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসিম মুনিরের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, এবং প্রশ্ন উঠছে—প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ কি সেনাবাহিনীর নির্দেশে চলছেন?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে চলমান শত্রুতা বন্ধ করার জন্য একটি সমঝোতার ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তান পুনরায় এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে (Pakistan ceasefire violation)। জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা, আখনুর এবং উধমপুর অঞ্চলে ভারী গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে, যা গত চার দিনের তীব্র সামরিক সংঘাতের পর উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে করা সমঝোতার গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উধমপুরে ড্রোন হামলা
সূত্র জানিয়েছে, উধমপুরে একটি ড্রোন হামলাও সংঘটিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এছাড়া, শ্রীনগরে ৭-৮টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা অঞ্চলটিতে সহিংসতা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়নে, পাঞ্জাবের পাঠানকোটেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে। কিছুক্ষণ আগে এই এলাকায় পাকিস্তানি ড্রোন দেখা গেছে বলে জানা গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাঠানকোট এবং গুরুদাসপুরে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট জারি করেছে, যাতে সম্ভাব্য বায়বীয় হুমকি রোধ করা যায়। এখনও পর্যন্ত এই এলাকায় কোনো বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়নি, তবে উভয় জেলায় এয়ার রেইড সাইরেন সক্রিয় করা হয়েছে (peshawar)।
সোফিয়া কুরেশি বলেন
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পাকিস্তানের যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘন একটি উসকানিমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ। আমরা পেশোয়ারে তাদের সামরিক ও জঙ্গি পরিকাঠামোর উপর নির্ভুল আঘাত হেনেছি, যা তাদের সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
অসিম মুনিরের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা
তিনি পাকিস্তানের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধেও সরব হয়ে বলেন, “পাকিস্তান দাবি করছে তারা আমাদের এস-৪০০ এবং ব্রহ্মোস ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ধরনের প্রচারণা তাদের হতাশা প্রকাশ করে।” এই সংঘাতের পটভূমিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসিম মুনিরের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মুনিরের কঠোর সামরিক নীতি এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই লঙ্ঘনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।
এই বিদেশি ডিফেন্ডারের সঙ্গে চুক্তি বাড়াল মোহনবাগান
পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলা
পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়, তা আইএসআই-সমর্থিত জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত বলে ভারত অভিযোগ করেছে। এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে, যাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলাবর্ষণ এবং যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘনকে আইএসআই-এর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শেহবাজ শরিফের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যুদ্ধবিরামের প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু এই লঙ্ঘন তার দুর্বল নেতৃত্ব এবং সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরতা প্রকাশ করে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনাবাহিনী সবসময় প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে, এবং অনেকে মনে করেন শরিফ মুনিরের চাপে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন।
সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে (peshawar)
সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “অসিম মুনির যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘনের নির্দেশ দিয়েছেন, আর শেহবাজ শরিফ নীরব দর্শক।” যদিও এই দাবি যাচাই করা যায়নি, তবে এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়। ভারত এই লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “পাকিস্তানের এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনো আপস করব না।”
ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত
ভারত ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রেখেছে, যা পাকিস্তানের কৃষি ও জলসেচনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানকে এবং ২০ শতাংশ ভারতকে বরাদ্দ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “যুদ্ধবিরামের লঙ্ঘন অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি। আমরা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
চীন পহেলগাঁও হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পেশোয়ারে ভারতীয় হামলার ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের শব্দে শহরের রাস্তাগুলি ফাঁকা হয়ে গেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও এই হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, হামলায় বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই প্রত্যাঘাত (peshawar) অপারেশন সিন্দুরের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানান, “আমাদের অভিযান কেবলমাত্র জঙ্গি শিবির এবং ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত পরিকাঠামোর উপর কেন্দ্রীভূত।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের স্কারদু, জ্যাকবাবাদ এবং ভোলারি বিমান ঘাঁটি ইতিমধ্যে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ভারত স্পষ্ট করেছে যে ভবিষ্যতে যেকোনো জঙ্গি হামলাকে যুদ্ধের কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে। আগামী সোমবার উভয় দেশের ডিজিএমও-দের আলোচনা এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং সেনাবাহিনীর প্রভাব শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। পেশোয়ারের (peshawar)এই হামলা ভারতের সামরিক শক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ।