বম্বে হাই কোর্টের (Bombay High Court) ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করেছে। সেখানে আদালত এক ব্যক্তির এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে স্ত্রীর প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে অবাক করা রায় ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্রের এক গৃহবধূর মৃত্যুর পর তাঁর বাবা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তুলেছিলেন।
তিনি অভিযোগ তুলে জানিয়েছিলেন, গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি তাঁর মেয়েকে টিভি দেখতে দিতেন না, একা একা মন্দিরে যেতে দিতেন না, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে দিতেন না এমনকি তাকে শতরঞ্চিতে ঘুমাতে বাধ্য করা হত। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি গৃহবধূর রান্না করা খাবার নিয়েও বিভিন্ন ধরনের ‘খোঁটা’ দেওয়া হত এবং মাঝ রাতে বালতি করে জল টানতে বাধ্য করা হত বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এভাবে এক রাতে জল তুলতে গিয়েই গৃহবধূর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ তুলেছিল মেয়েটির পরিবার। তবে একক বিচারক বিচারপতি অভয় এস. ওয়াঘওয়াসে এই অভিযোগগুলোকে ‘নিষ্ঠুরতা’ বলে মনে করেননি। তিনি জানিয়েছেন যে, এই অভিযোগগুলো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় নির্যাতন হিসেবে গণ্য হবে না। এই ধারায় যেসব কর্মকাণ্ড নির্যাতন হিসেবে আখ্যায়িত হয়, তা শারীরিক ও মানসিক দুটো ধরনের হতে পারে।
কিন্তু আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মামলার ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযোগ শুধু পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে গণ্য হবে এবং এর মধ্যে কোনো শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার ধরা পড়ছে না। সেইসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ মৃতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছিলেন যে, তাকে মধ্যরাতে জল আনার জন্য বাধ্য করা হত।
পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা তাকে রাত ১.৩০টায় জল তুলে আনার জন্য পাঠাত। এই কারণেই আদালত ওই অভিযোগটি খারিজ করে দেয়। প্রসঙ্গত, এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০২ সালের ১ মে। যেখানে আদালত একটি প্রাথমিক বিচার চালিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সেই সময়কার মামলা দায়ের করেছিল, তাঁদের দাবি ছিল স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তবে বম্বে হাই কোর্ট জানিয়েছে, “মৃতের পরিবার, অভিযোগকারী এবং সাক্ষীদের মধ্যে প্রায় দুই মাসের বিরতি ছিল। তারা (মৃতের মা, মামা) স্বীকার করেছেন যে, তাদের সঙ্গে মৃতের কোনো যোগাযোগ ছিল না, না তার লেখা কোনও চিঠি ছিল, না মৌখিকভাবে সে কখনো অভিযোগ জানিয়েছিল যে তার প্রতি কোনও নির্যাতন হয়েছে।” এছাড়া, আদালত আরও বলেছে যে, “এটা স্পষ্ট যে, আত্মহত্যার সময় বা তার আগে কোনো নির্যাতন, দাবি বা শোষণ ঘটেনি যা অভিযুক্তদের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। তবে আত্মহত্যার কারণ এখনও রহস্যময়।”
আদালত নিশ্চিত করেছে যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা নিষ্ঠুরতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই বম্বে হাই কোর্টের বিচারক গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে রায় দিয়েছেন যে, তাঁদের এধরনের অপরাধের জন্য দায়ী করা সম্ভব নয়। বম্বে হাই কোর্টের এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে কোনো সমস্যা বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা থাকলেও তা অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় নির্যাতন প্রমাণ করার জন্য শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারের যথেষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে। শুধু গৃহস্থালির কিছু বিষয় বা পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা অমিলকে কঠিন নির্যাতন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এই রায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে আর সেটা হল আত্মহত্যা ও নির্যাতনের মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণ করতে হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন।
যদি আত্মহত্যার সাথে কোনো নির্যাতন বা অত্যাচারের সরাসরি সম্পর্ক না থাকে তবে সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া আইনত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আদালতের এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, কোনো গৃহস্থালি সমস্যা বা অভ্যন্তরীণ অমিল যদি শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে না পৌঁছায় তবে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।