‘বিড়ালকে দুধের বাটি পাহারা দিতে বলা হয়েছে’ , কেন বললেন রাজনাথ ?

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (rajnath-singh) মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী প্যানেলের (১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটি) ভাইস-চেয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।…

rajnath-singh messege for pakistan

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (rajnath-singh) মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী প্যানেলের (১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটি) ভাইস-চেয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তকে “বিড়ালকে দুধ পাহারা দেওয়ার জন্য নিয়োগ করার মতো” বলে বর্ণনা করেছেন।

রাজনাথ সিং বলেন (rajnath-singh)

উত্তরাখণ্ডে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে রাজনাথ সিং (rajnath-singh) বলেন, “সাম্প্রতিক উদাহরণ হল, রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবিরোধী প্যানেলের ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই প্যানেলটি ৯/১১ হামলার পর গঠিত হয়েছিল। আমরা সবাই জানি, ৯/১১ হামলার পিছনে কারা ছিল। এটা কারও কাছে গোপন নয় যে, সেই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছিল। এটা ঠিক যেন বিড়ালকে দুধ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া।”

   

তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র চমকপ্রদ নয়, বরং রাষ্ট্রসংঘের (rajnath-singh) মতো একটি সংস্থার সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে গাম্ভীর্যের প্রতিফলন ঘটায়। কীভাবে ভুলে যাওয়া যায় যে, এই পাকিস্তানই সেই দেশ, যে দেশের মাটি বিশ্বের জঙ্গি সংগঠনগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।” রাজনাথ সিংয়ের এই বক্তব্য ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করে, যে পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রাষ্ট্রসংঘ-নিষিদ্ধ জঙ্গি এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয়দাতা।

Mahindra XEV 9e-এর নয়া ভ্যারিয়েন্ট আসছে, এবার আরও বেশি ব্যাটারি অপশনে বেছে নেওয়া যাবে

পাকিস্তানের রাষ্ট্রসংঘে ভূমিকা

রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে পাকিস্তান তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১৩৭৩ কাউন্টার-টেররিজম কমিটির ভাইস-চেয়ার হিসেবে কাজ করবে(rajnath-singh)। এছাড়া, পাকিস্তান ডকুমেন্টেশন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াগত বিষয়ে ইনফরমাল ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সাধারণ নিরাপত্তা পরিষদ নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক গ্রুপের সহ-চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে।

২০২৫-২৬ মেয়াদে পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য—চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র—এবং দশটি অস্থায়ী সদস্য—আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া এবং সোমালিয়া—অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য পাঁচটি নতুন অস্থায়ী সদস্য—বাহরাইন, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লাইবেরিয়া, লাটভিয়া এবং কলম্বিয়া—নির্বাচিত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটিগুলো ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এবং এর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়। পাকিস্তানের এই ভূমিকা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত।

ভারতের অবস্থান এবং সমালোচনা

ভারত বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, (rajnath-singh) পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রাষ্ট্রসংঘ-নিষিদ্ধ জঙ্গি এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয়দাতা। ওসামা বিন লাদেন, মাসুদ আজহার, হাফিজ সাঈদ এবং দাউদ ইব্রাহিমের মতো কুখ্যাত জঙ্গিরা পাকিস্তানে আশ্রয় পেয়েছে।

২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে মার্কিন নৌবাহিনীর অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়, যা পাকিস্তানের জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার ভূমিকাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। এছাড়া, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, ২০১৬ সালের পাঠানকোট হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার মতো ঘটনাগুলো পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত।

Advertisements

রাজনাথ সিং (rajnath-singh) পাকিস্তানের এই নিয়োগকে “হাস্যকর” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “যে দেশ জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়, তাকে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।” তিনি রাষ্ট্রসংঘের গাম্ভীর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীলতার অভাব প্রকাশ করে।

ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

ভারত ২০২১-২২ মেয়াদে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ২০২২ সালে কাউন্টার-টেররিজম কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। সেই সময় ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী (rajnath-singh) কার্যকলাপের ভূমিকা তুলে ধরেছিল। সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ভারতের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে।

কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া এবং অন্যান্য দেশে সফর করে এই অভিযানের ন্যায্যতা তুলে ধরেছে। থারুর বলেন, “পাকিস্তানের কোনো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়, তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের এই নিয়োগে ভারতের উদ্বেগ শুধু ভারতেরই নয়, অনেক বিশ্লেষক এটিকে রাষ্ট্রসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর প্রশ্নচিহ্ন হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তানের তালিবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগও উদ্বেগের কারণ, কারণ পাকিস্তানের তালিবানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তালিবানের হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর যোগাযোগের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

যুক্তরাষ্ট্রের (rajnath-singh) মতো দেশগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখলেও, ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সমর্থন পেয়েছে। মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং কোরি বুকার পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছেন এবং ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তবে, কলম্বিয়ার মতো কিছু দেশ পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে, যা ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরে।

ভারতের পাঁচ-দফা পরিকল্পনা

রাজনাথ সিং সন্ত্রাসবাদের (rajnath-singh) বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের জন্য একটি পাঁচ-দফা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন, যা হল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ, জঙ্গিদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা, জঙ্গিদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তথ্য বিনিময় এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ শুধু ভারতের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বব্যাপী হুমকি।” তিনি রাষ্ট্রসংঘকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

পাকিস্তানকে রাষ্ট্রসংঘের (rajnath-singh) সন্ত্রাসবিরোধী প্যানেলের ভাইস-চেয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগ। রাজনাথ সিংয়ের “বিড়ালকে দুধ পাহারা দেওয়ার” উপমা এই সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতা তুলে ধরে। ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের ভূমিকা প্রকাশ করছে।

তবে, রাষ্ট্রসংঘের এই সিদ্ধান্ত ভারতের পররাষ্ট্র নীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ভারতকে এখন আরও জোরালোভাবে তার অবস্থান তুলে ধরতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ করতে হবে, যাতে পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।