LTTE Plan B: শ্রীপেরুম্বুদুরে বিফল হলে দিল্লিতে হত্যা করা হত রাজীব গান্ধীকে

আজ থেকে ঠিক ৩১ বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর। ১৯৯১ সালের ২১ মে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হয়। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদুরে একটি…

আজ থেকে ঠিক ৩১ বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর। ১৯৯১ সালের ২১ মে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হয়। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুম্বুদুরে একটি নির্বাচনী মিছিলে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। ধনু নামের এক মহিলা আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় ওই মহিলা সহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়। গণহত্যা যা কেবল দেশকেই নয়, বিশ্বকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে তাঁর মৃত্যুর ৩১ বছর উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই হত্যালীলার কী ব্লু প্রিন্ট ছিল তাও প্রকাশ্যে এসেছে। কী সেই ব্লু প্রিন্ট?

তারিখটা ছিল ১৯৯১ সালের ১২ মে। দেশে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। ওই দিন তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংহের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। শিবরাসনও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা থেকে চেন্নাই ফিরে আসেন শিবরাসানা। সেই মিছিলে শিবরাসনও সঙ্গে নিয়ে যান ধনু, শুভ ও নলিনীকে। উদ্দেশ্য ছিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে গিয়ে তাঁকে মালা পরিয়ে চর্চা করা। ভিপি সিং মঞ্চে আসার আগেই ধনু ও শুভ তাঁকে মালা পরিয়ে দেন। রাজীব গান্ধীকে হত্যা করার জন্যই এই পরিকল্পনা শুরু হয়।

   

এর সাত দিন পর, ১৯ মে, রাজীব গান্ধীর নির্বাচনী কর্মসূচি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এর থেকেই শিবরাসান জানতে পারেন, রাজীব গান্ধী ২১ মে শ্রীপেরুম্বুদুরে আসছেন। শিবরাসন শুভ এবং ধনুকে তাদের শেষ উদ্দেশ্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। গত ২১ মে ভোরে ধনু তার শরীরে বিস্ফোরক নিয়ে তৈরি ছিলেন। এর পর শিবারাসন স্যাজিটারিয়াস ও শুভকে অটো করে নলিনীর বাড়িতে নিয়ে যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রীপেরুম্বুদুরের সমাবেশস্থলে পৌঁছে যান সকলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজীব গান্ধীও সেখানে পৌঁছে যান। তখনই ধনু শিবরাসন ও শুভকে চলে যেতে বলে। মালা দেওয়ার অজুহাতে, ধনু জীব গান্ধীর কাছে আসে এবং বিস্ফোরণ ঘটে। কিছুক্ষণ পর চারিদিক শুধু ধোঁয়া, রক্তে ভরে যায়। বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধী-সহ মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়। ধনুর পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হরিবাবুরও মৃত্যু হয়। হরিবাবু এখানে সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর কাজ ছিল সমস্ত উন্নয়নের ছবি তোলা। এই পুরো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল শিবরাসান।

জানা যায়, রাজীব গান্ধীর হত্যার পিছনে এলটিটিই-র হাত ছিল। পুরো গল্পটা শুরু হয় শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিয়ে। শ্রীলংকার জনসংখ্যার অধিকাংশই ছিল সিংহলি জাতি যারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করত। এখানে প্রচুর সংখ্যক তামিলও ছিল, কিন্তু তারা ক্রমাগত উপেক্ষিত ছিল। ১৯৭২ সালে শ্রীলংকার সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এটি বৌদ্ধধর্মকে দেশের প্রাথমিক ধর্ম হিসাবে ঘোষণা করেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, বৌদ্ধধর্মের সিংহলি জনগণকে সর্বত্র অগ্রাধিকার এবং সংরক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছিল। তামিলরা মার্জিনে চলে গেছে।

ফলে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তামিলরা। তামিল যুবক ভেলুপিল্লাই প্রভাকরন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম অর্থাৎ এলটিটিই নামে একটি সংগঠন গঠন করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে এলটিটিই একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করে। এরপর ১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই এলটিটিই শ্রীলঙ্কার ১৩ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে। এরপর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সিংহলি ও তামিলদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শ্রীলঙ্কা সরকারও তাতে ঢুকে পড়ে। ১৯৮৭ সালে ভারত সরকার ও শ্রীলঙ্কা সরকারের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঠিক হয়েছিল, এলটিটিই-র হাত থেকে অস্ত্র ছাড়াবে ভারত। চুক্তির দিনই শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠায় ভারত। এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স (আইপিকেএফ)। শ্রীলঙ্কার পালালির জাফনার কাছে ঘাঁটি গেড়েছে ভারতীয় সেনা। এলটিটিই-ও অস্ত্র সমর্পণে রাজি হয়েছে। অনেক এলটিটিই জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী এলটিটিই’র দুই কমান্ডারকে আটক করে। পালালিতেই তাকে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী এবং আইপিকেএফের যৌথ হেফাজতে রাখা হয়েছিল।

সেই এলটিটিই কমান্ডারদের শ্রীলঙ্কা সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি হয় আইপিকেএফ। তার পর সায়ানাইড খেয়ে প্রাণ দেন ওই কমান্ডাররা। এর ফলে এলটিটিই এবং আইপিকেএফের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর আইপিকেএফ ‘অপারেশন পবন’ চালায়। এই অভিযানে ভারতীয় সেনার বহু জওয়ান শহিদ হন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন বছর শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করে। ১৯৯০ সালের ২৪ মার্চ আইপিকেএফের শেষ বহর শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে আসে।

মনে করা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় সেনার এই অভিযানই রাজীব গান্ধীর হত্যার কারণ। এলটিটিই সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ নেওয়া। এলটিটিই মানব বোমার জন্য তিন মহিলাকে প্রস্তুত করেছিল। প্রথম জন ধনু, দ্বিতীয়জন শুভ এবং তৃতীয়জন আতিরাই। পরিকল্পনা ছিল, ধনু ব্যর্থ হলে শুভা তা করবেন এবং শুভও যদি ব্যর্থ হন, তা হলে দিল্লিতে এই ঘটনা ঘটাবেন অন্য জন। সোনিয়া নামে দিল্লির মোতিবাগ এলাকায় থাকতেন আত্রে।