জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান যোগে ‘গোলাপী শহরে’ গ্রেপ্তার মৌলবী ওসামা

rajasthan-ats-arrests-ttp-linked-maulvi-osama-jaipur-terror-case

রাজস্থানের জয়পুরে বড়সড় সাফল্য অর্জন করেছে রাজ্য অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (ATS)। আফগান জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (Tehreek-e-Taliban Pakistan – TTP)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার অভিযোগে মৌলবী ওসামা ওরফে ওসামা উমর-কে গ্রেপ্তার করেছে রাজস্থান ATS।

Advertisements

ATS সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB)-র ইনপুটের ভিত্তিতে ৩১ অক্টোবর সংচোর (Sanchore) এলাকা থেকে একটি যৌথ অভিযানে ওসামাকে আটক করা হয়। এই অভিযানে NIA-ও যুক্ত ছিল। চার দিনের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের পর ATS আনুষ্ঠানিকভাবে ওসামাকে গ্রেপ্তার করে এবং তার বিরুদ্ধে UAPA (Unlawful Activities Prevention Act)-এর ধারায় মামলা রুজু করে।

   

ATS-এর আইজি বিকাশ কুমার জানিয়েছেন, “তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ওসামা গত চার বছর ধরে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের এক শীর্ষ কমান্ডারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল।”

৩১ অক্টোবরের অভিযানে রাজস্থান ATS চারটি জেলায় একযোগে তল্লাশি চালায় এবং পাঁচ সন্দেহভাজনকে আটক করে—ওসামা উমর, মাসুদ, মোহাম্মদ আয়ুব, মোহাম্মদ জুনায়েদ এবং বশির। তদন্তে উঠে এসেছে, ওসামাই দলের মূলচক্রী ছিল এবং অন্য চারজনকে ব্রেনওয়াশ করে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে উৎসাহ দিচ্ছিল।

বিকাশ কুমার আরও জানান, “ওসামা ইন্টারনেট কলিং অ্যাপ ব্যবহার করে তেহরিক-ই-তালিবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সে চারজন অন্য সন্দেহভাজনকে ধর্মীয় প্রভাব ও ভুল মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে সংগঠনে যোগ দিতে প্ররোচিত করছিল।”

ATS জানিয়েছে, অভিযুক্তের বাড়ি থেকে একাধিক ডিজিটাল ডিভাইস, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং নথি উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো বর্তমানে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ডিভাইসগুলিতে সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রমাণ ও অর্থনৈতিক লেনদেনের সূত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ওসামাকে আদালতে পেশ করে রিমান্ডে নেওয়া হবে এবং বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলবে বলে ATS সূত্রে জানানো হয়েছে। তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, ওসামার যোগাযোগ শুধুমাত্র পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কিনা, নাকি ভারতের ভেতরে কোনও “স্লিপার সেল” তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছিল।

Advertisements

তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP) হল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় এক কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন, যা একাধিক আন্তর্জাতিক হামলার সঙ্গে যুক্ত। সংস্থাটি পাকিস্তানের ভিতরে বহু সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিও বহুবার সতর্কবার্তা জারি করেছে যে, সংগঠনটির সদস্যরা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

রাজস্থানে এই গ্রেপ্তারের পর রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। জয়পুর ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে পুলিশ ও ATS টহল বৃদ্ধি করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সন্দেহজনক কার্যকলাপ নজরে আনতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।

এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজস্থান ATS-এর পদক্ষেপের প্রশংসা শুরু হয়েছে। অনেকেই এটিকে “সময়োপযোগী এবং সাহসী পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্রেপ্তার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা ও দ্রুত পদক্ষেপের এক নিখুঁত উদাহরণ।

তদন্তকারীরা আশা করছেন, এই মামলার মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে সম্ভাব্য বিদেশি জঙ্গি প্রভাব এবং তাদের আর্থিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসবে।