মধ্যপ্রদেশে কাশির সিরাপ কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ১৯ জন শিশুর (Syrup Scandal)। তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বিষাক্ত ওষুধে প্রাণ চলে গেল ১৯ জন শিশুর তা মেনে নিয়ে পারেনি স্থানীয়রাও। এই ট্র্যাজেডির ছায়ায় এখন রাজগড় জেলার মেডিকেল স্টোরগুলোতে ওষুধ পরিদর্শন দলের তীব্র তল্লাশি শুরু হয়েছে। শিশুরা কেবল কাশি-জ্বরের জন্য সাধারণ সিরাপ খেয়েই কিডনি ফেলিওরে প্রাণ হারিয়েছে এই ঘটনার শুরু হয় আগস্টের শেষভাগে।
চিন্দোয়াড়ার পারাসিয়া এলাকায় প্রথমে ছয়টি শিশু কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। তারা সবাই পাঁচ বছরের নিচে, কাশি-জ্বরের জন্য স্থানীয় ডাক্তার প্রভীন সোনি ‘কোল্ড্রিফ’ সিরাপ প্রেসক্রাইব করেছিলেন। পরে এই সংখ্যা বেড়ে ১৯-এ পৌঁছে যায়। তামিলনাড়ুর ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে, সিরাপে ৪৮.৬% ডায়ইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি)—একটা বিষাক্ত শিল্প রাসায়নিক, যা অ্যান্টিফ্রিজ আর ব্রেক ফ্লুইডে ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটারদের দাপট, নাকি স্পিনারদের বিপর্যয়? ফাঁস পিচ রিপোর্ট!
এমনকি অল্প পরিমাণও খেলে কিডনি ধ্বংস হয়ে যায়। মধ্যপ্রদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করে, আর তামিলনাড়ুর স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ডাক্তার প্রভীন সোনিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে—তাঁর ক্লিনিক থেকে বেশিরভাগ শিশু সিরাপ পেয়েছিল।এখন এই বিপত্তির ছায়া পড়েছে রাজগড় জেলায়।
মঙ্গলবার থেকে ওষুধ পরিদর্শন দল মেডিকেল স্টোরগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। রাজগড়ের এসডিএম অফিসের নির্দেশে দলগুলো সব স্টোরে ‘কোল্ড্রিফ’ এবং অনুরূপ সন্দেহজনক সিরাপের স্টক চেক করছে। “যেকোনো সন্দেহজনক ওষুধ পেলে তাৎক্ষণিক বাজেয়াপ্ত করা হবে, লাইসেন্স বাতিল হতে পারে,” বলছেন জেলা ওষুধ নিয়ন্ত্রক অফিসার রামকুমার সিং।
গতকাল এক স্টোর থেকে দশটা বোতল বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যাতে ডিইজি-এর মাত্রা অতিরিক্ত ছিল। দোকানদাররা ভয়ে কাঁপছেন, কিন্তু গ্রাহকরা বলছেন, “এখন থেকে ওষুধ কিনে লেবেল চেক করব, শিশুদের জন্য কোনো ঝুঁকি নেব না।” রাজগড়ের মতো গ্রামীণ এলাকায় মেডিকেল স্টোরগুলো প্রায়ই ছাড়া-ছাড়ি ওষুধ বিক্রি করে, যা এখন তীব্র নজরদারির মুখে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও সতর্কতা জারি করেছে—দুই বছরের নিচের শিশুদের কাশির সিরাপ দেওয়া নিষিদ্ধ। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি) দল মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালাচ্ছে। ছটি রাজ্যের ১৯টা ওষুধ কারখানায় তদন্ত শুরু হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় না ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “এটা আমাদের সিস্টেমের ব্যর্থতা, আমরা দোষীদের শাস্তি দেব।” কিন্তু পরিবারগুলোর কাছে এসব কথা শুধু শব্দ—তারা চান ন্যায়বিচার আর ক্ষতিপূরণ।