বিহারের নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে এক বিরল দৃশ্য৷ রবিবার বেগুসরাইয়ের এক পুকুরে নেমে মাছ ধরলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিকাশশীল ইন্সান পার্টির (ভিআইপি) প্রধান ও ‘মল্লাহ পুত্র’ নামে পরিচিত মুখেশ সাহনি। দু’জনকে একসঙ্গে নৌকায় করে মাঝপুকুরে নামতে দেখা যায়। সাহনি কোমরজল পেরিয়ে জাল ফেলতেই চিৎকারে ফেটে পড়ে জনতা। মুহূর্তের মধ্যেই সেই দৃশ্য ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে।
রাহুল গান্ধী, তাঁর স্বাভাবিক সাদা টি-শার্ট ও কার্গো প্যান্টে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জলে নেমে পড়েন সাহনির সঙ্গে। স্থানীয় জেলেরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স (X) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, রাহুল স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁদের দৈনন্দিন সমস্যার বিষয়ে। পোস্টে জানানো হয়েছে, মৎস্যজীবীদের জন্য ভারত জোট (INDIA bloc) ক্ষমতায় এলে তিন মাসের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ৫,০০০ টাকার আর্থিক সহায়তা ও বীমা প্রকল্প চালু করবে।
রাহুলকে মাছ ধরার কৌশল দেখান সাহনি
ভিআইপি প্রধান সাহনি, যিনি নিজেও প্রাক্তন বিহার মন্ত্রী—রাহুলকে মাছ ধরার কৌশল দেখান, আর কংগ্রেস নেতা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ও নিজে জাল ফেলেও চেষ্টা করেন। জনতার সামনে এ যেন রাজনীতির মাঠে এক ‘নদীর সংলাপ’।
তবে এই হালকা মুহূর্তের পরেই রাহুলের বক্তৃতায় ফিরে আসে তীব্র রাজনৈতিক সুর। বেগুসরাই ও খাগাড়িয়া জেলার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। অভিযোগ করেন, “মোদীর বড় বুক আছে, কিন্তু সাহস নেই। মহাত্মা গান্ধীর শরীর ছিল দুর্বল, তবু তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। আর মোদী ট্রাম্পের ফোনেই ভয় পান। অপারেশন সিন্দূরের সময় ট্রাম্প ফোন করতেই মোদীর প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল। ওঁকে এখন রিমোট কন্ট্রোল করছে আম্বানি আর আদানি।”
বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা
রাহুল বলেন, “১৯৭১ সালে আমেরিকা ইন্দিরা গান্ধীকে ভয় দেখিয়েছিল, কিন্তু তিনি পিছিয়ে যাননি। আর আজ মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্টের চোখে চোখ রাখতেও ভয় পান।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, জিএসটি ও নোটবন্দির মতো সিদ্ধান্ত আসলে ছোট ব্যবসা ধ্বংস করে বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা। রাহুলের দাবি, “ভারত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে ছোট শিল্প, স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উন্নয়নই হবে মূল লক্ষ্য।”
জনসভায় তিনি বলেন, “মোদী বলেন সস্তায় ইন্টারনেট পাচ্ছেন, reels দেখছেন। কিন্তু সেই টাকা কোথায় যায়? আম্বানির ঘরে।”
বিহারে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত
এছাড়া ভোটার তালিকা নিয়েও অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস নেতা। তাঁর দাবি, এনডিএ সরকার বিহারে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করছে, মহাগঠবন্ধন সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে ভোটার তালিকা থেকে।
রাহুল আশ্বাস দেন, ভারত জোট ক্ষমতায় এলে মুখেশ সাহনিকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়া হবে।
বিহারের নির্বাচনী ময়দানে রাজনীতির সঙ্গে এখন মিশে গিয়েছে জনসংযোগের নতুন ভাষা—নদীর জলে পা ভেজানো, জেলে জীবনের গল্প শোনা, আর সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। রাহুল গান্ধীর এই ‘ফিশিং ডিপ্লোমেসি’ নিঃসন্দেহে বিহারের প্রচারে এক নতুন অধ্যায় যোগ করল।


