রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Putin) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন যে তিনি এই বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে ভারত সফরে আসছেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, “আমি অধীর আগ্রহে আমার ভারত সফরের অপেক্ষায় আছি এবং আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার ও প্রিয় বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মুখিয়ে আছি।”
এই সফরটি হবে ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকের অংশ, যা দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং কৃষিক্ষেত্রে একাধিক নতুন চুক্তি হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে খবর।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর আমদানি শুল্ক ৫০% পর্যন্ত বাড়িয়েছেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে তেল ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় চাপ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু পুতিন সেই চাপকে তীব্র সমালোচনা করে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, “ভারত যদি আমাদের জ্বালানি ছেড়ে দেয়, তাহলে প্রায় ৯-১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে। কিন্তু যদি তারা না দেয়, তবুও নিষেধাজ্ঞা আসবে এবং ক্ষতিও একই রকম হবে। তাহলে কেন ছেড়ে দেবে? ভারতীয় জনগণ কখনও নিজেদের অপমান মেনে নেবে না এবং আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যথেষ্ট ভালোভাবে চিনি — তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না।”
পুতিন আরও বলেন, মার্কিন চাপের মুখে পড়েও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও স্বাধীন কূটনৈতিক নীতি বজায় রাখবে। “ভারতের মতো শক্তিশালী দেশ কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের স্বার্থ বিসর্জন দেবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। রাশিয়া থেকে ভারত বিপুল পরিমাণে তেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানি করে, কিন্তু ভারতের রপ্তানি তুলনায় অনেক কম। পুতিন জানান, এই ঘাটতি কমাতে তিনি ভারতীয় কৃষিপণ্য ও ওষুধ আমদানির পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি বলেন, “ভারতের কৃষি ও ওষুধ শিল্প বিশ্বের সেরা। আমরা রাশিয়ায় এর বাজার প্রসারিত করতে চাই, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও মজবুত করবে।”
পুতিন স্মরণ করিয়ে দেন যে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভিত্তি বহু পুরনো। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকেই ভারত মস্কোর অন্যতম ঘনিষ্ঠ অংশীদার। প্রতিরক্ষা, মহাকাশ প্রযুক্তি, পারমাণবিক শক্তি এবং জ্বালানি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বহু কৌশলগত প্রকল্পে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, “ভারত শুধু আমাদের বাণিজ্য সহযোগী নয়, এটি আমাদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য কৌশলগত বন্ধু। ভবিষ্যতেও আমরা এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাব।”
বিশ্লেষকদের মতে, ডিসেম্বরের মোদী-পুতিন বৈঠক শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিস্থিতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি বড় বার্তা হতে পারে।
পুতিনের এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশ শুধু জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে নয়, কৃষি, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও নতুন সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে। একই সঙ্গে, এটি ভারতের “স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি” বজায় রাখার এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।