মোদীর তৃতীয় দফায় LLB পাঠক্রমে ঢুকছে ‘নারী বিরোধী’ মনুস্মৃতি আইন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় গরম

আইনে সবাই সমান আর প্রাচীন মনুস্মৃতি সূত্রে নারী নিষ্পেশিত। কেন সেই ‘মনুস্মৃতি’ পাঠ্যসূচিতে আনা হবে এমনই দাবি করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সরগরম। জানা যাচ্ছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের…

আইনে সবাই সমান আর প্রাচীন মনুস্মৃতি সূত্রে নারী নিষ্পেশিত। কেন সেই ‘মনুস্মৃতি’ পাঠ্যসূচিতে আনা হবে এমনই দাবি করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সরগরম। জানা যাচ্ছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্র থেকে মনুস্মৃতি অংশটি আইনের পাঠ্য হিসেবে যুক্ত করা হবে।

মনুস্মৃতি বাতিল করো আওয়াজ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে উঠেছে প্রতিবাদের ঝাড়। অধ্যাপকদের একাংশ জানিয়েছেন, আইন বিভাগের এই সিদ্ধান্তে তারা উদ্বিগ্ন। এটি যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়।

   

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই এলএলবি পাঠক্রমে মনুস্মৃতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পেপার থাকবে। বিষয়টির নামকরণ হবে ‘আইনের তাত্ত্বিক ভিত্তি’।এই পাঠ্যসূচি চালু হবে স্নাতক পর্যায়ে। জানা গেছে, এই সংশোধিত পাঠক্রমটির প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদে পেশ করা হবে শীঘ্রই। অনুমোদন এলেই মনুস্মৃতি আইন চালু হবে আগস্ট মাসে।

মনুস্মৃতি জানার জন্য মেধাতিথির মনুভাষ্য নামে পাঠ্য বইটির লেখক জি এন ঝা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক (LLB) পাঠক্রমে বিশ্লেষণ ভিত্তিক যুক্তিবাদ নামে একটি শাখার আওতায় স্থান পাবে এই বিষয়।প্রথম সেমিস্টারেই এর পরীক্ষা সমাপ্ত হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডীন অঙ্কু ভালি টিকু বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালে যে নয়া শিক্ষানীতি চালু করেছেন তার অনুষঙ্গ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত। পাশ্চাত্য শিক্ষার বদলে শিক্ষার মধ্যে ভারতীয় ভাবধারা যুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। এর ফলে পড়ুয়ারা ভাল-মন্দের তুলনা নিজেরাই করতে সমর্থ হবেন।

পাঠ্যসূচিতে মনুস্মৃতি আনার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। সংগঠনের নেতা যোগেশ সিং উপাচার্যকে চিঠিতে লিখেছেন, আমরা অবগত হয়েছি, আইন বিভাগের পাঠক্রমে মনুস্মৃতি যুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই পাঠক্রম সম্পূর্ণ প্রগতি বিরোধী। এর মধ্যে নারী শিক্ষা ও দরিদ্র সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর মন্তব্য স্থান পেয়েছে।

প্রতিবাদীদের চিঠিতে বলা হয়েছে, এদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র এবং দেশবাসীর অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলা। তাদের উন্নতি নির্ভর করবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা প্রগতিমুখী হয় এবং শিক্ষকেরা তাদের ভাষ্যে কতটা তা তুলে ধরেন তার উপর। অথচ মনুস্মৃতিতে নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে কটু মন্তব্য করা হয়েছে। এই শিক্ষা নারী-পুরুষ সাম্যেরও বিরোধী। অতএব এই পাঠক্রম চালু হলে লঙ্ঘন করা হবে ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক আদর্শ। এছাড়া যে তিনটি সংশোধিত ফৌজদারি দণ্ডবিধি নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সেই তিন আইনও পাঠক্রমে চালু করতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। সন্দেহ নেই, দেশবাসীর মনে ন্যায্যতা তৈরিই এর উদ্দেশ্য।