প্রসেনজিৎ চৌধুরী: সংসদে যাবেন গান্ধী পরিবারের কন্যা? নেহরুর প্রপৌত্রী ও ইন্দিরার পৌত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর (Priyanka Gandhi) জয় কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্রে নিশ্চিত বলেই ধরে নিচ্ছে কংগ্রেস। লক্ষনীয় তাঁকে উত্তরপ্রদেশে রায়বেরিলি অথবা আমেঠিতে বারবার প্রার্থী করার দাবি ছিল। প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হননি। এবার তিনি সম্মতি দিলেন। কেরলের কংগ্রেস ঘাঁটি ওয়েনাড থেকে উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করছে কংগ্রেস। এই কেন্দ্রের সাংসদ পদ ছেড়ে দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী। তিনি রায়বেরিলি কেন্দ্র ধরে রাখলেন। ফলে দক্ষিণের বাম শাসিত রাজ্য কেরলে বাজল উপনির্বাচনের ঢাক।
লোকসভা নির্বাচনে অ-বিজেপি দলগুলির সমন্বয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠিত হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, মুখে যতই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন তিনি জোটের হোতা আসলে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার সিপিআইএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। নির্বাচনের আগে জোটের প্রতিটি বৈঠকে কংগ্রেসের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বিশেষ আলোচনায় বারবার দেখা গেছিল সীতারামকে। যদিও কেরলের মাটিতে দুই শরিকের ভোট লড়াই হয়।
লোকসভা নির্বাচনে কেরল থেকেই সর্বাধিক চমক এসেছে বিজেপির। এ রাজ্যেই প্রথমবার বাম-কংগ্রেস বাইনারি ভেঙেছে বিজেপি। ঠিক এমনই বাম-কংগ্রেস বাইনারি ভেঙে ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় সরকার গড়েছিল বিজেপি। তবে ত্রিপুরার মত কেরলে এখনো মারকাটারি সাফল্য আসেনি বিজেপির খাতায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে এ রাজ্যে বিজেপি খাতায় একটি লোকসভা চলে যাওয়া ‘বড় সাফল্য’ বলেই ধরে নিয়েছে সংঘ পরিবার। কারণ কেরলেই সংঘ বনাম বাম শক্তির রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়। দুপক্ষেই নিহতের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
লোকসভা নির্বাচনে কেরলে বাম-কংগ্রেস বাইনারি ভাঙার নজির হয়েছে ত্রিশূর কেন্দ্রে। বিজেপির রাজনৈতিক খতিয়ানে লেখা হয়েছে দলের প্রথম কেরলিয়ান সাংসদের নাম। দক্ষিণ ভারতে কর্নাটকের পর কেরলে জমি শক্ত করতে মরিয়া বিজেপি। তাদের এই লক্ষ্যমাত্রায় অন্যতম কাঁটা বাম শিবির ও কংগ্রেসের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি। সংঘের বিশ্লেষণ, ত্রিশূর থেকে জয় শুরু হয়েছে শেষ হবে তিরুঅনন্তপুরমে। উল্লেখ্য কেরলের এই রাজধানী শহরের পুরনিগমে বিজেপির শক্তি প্রকট। যদিও পুরনিগম বাম জোট এলডিএফ দখলে।
এ রাজ্যের রাজনৈতিক গতি অনুসারে সরকার পরিবর্তনে ধারাবাহিকতা গত কয়েকটি দশকে দেখা গেছে। পালা করে বাম ও কংগ্রেস সরকার গড়ে। তবে সর্বশেষ ২০২১ সালের কেরল বিধানসভা নির্বাচনে পরপর দুবার সিপিআইএম নেতৃত্বে এলডিএফ সরকার চলছে। বাম সরকার থাকলেও গত দুটি লোকসভা ভোটে রাজ্যের ২০টি আসনের সিংহভাগ দখল করে রেখেছে কংগ্রেস। সেরকমই একটি আসন ওয়েনাড কেন্দ্র।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড থেকে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এলডিএফের সিপিআই নেত্রী অ্যানি রাজা। তিনি সিপিআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী। ভোটের ফলাফলে ওয়েনাডে কংগ্রেস জয়ী হলেও তাদের ভোট শতাংশ নিম্নমুখী। তুলনায় অল্প ভোট বেড়েছে বাম শিবিরের। তারা দ্বিতীয় স্থানে। আর লক্ষাধিক ভোট টেনে বিজেপি তৃতীয়। উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাম ও রাম শিবিরের মধ্যে লড়াই প্রবল।