ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আধ্যাত্মিক সাধক প্রেমানন্দ জি মহারাজ বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাঁর দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে, এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিয়মিত ডায়ালিসিস নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় দেশজুড়ে সাধারণ ভক্ত থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব — সকলেই মহারাজের দ্রুত আরোগ্য কামনায় প্রার্থনায় মগ্ন।
‘ব্লু স্টার’ মন্তব্যে চিদাম্বরমের বিতর্কিত কথা, শিখদের পুরনো ক্ষত জাগ্রত
ভক্তদের অগাধ ভালোবাসা, কিন্তু মহারাজের অস্বীকার
মহারাজের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজার হাজার ভক্ত এগিয়ে এসেছেন নিজেদের কিডনি দান করার প্রস্তাব নিয়ে। এমনকি অনেক সেলিব্রিটি ও সমাজের বিশিষ্ট মানুষও সেই তালিকায় আছেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই মহারাজ বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন
“আমি কারও জীবনে কষ্ট আনতে চাই না। এই শরীর যতদিন আছে, ততদিনই ভগবানের সেবা করব।” ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপন একটি আইনসম্মত প্রক্রিয়া, যা Transplantation of Human Organs and Tissues Act দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শুধুমাত্র নিকট আত্মীয়ই দান করতে পারেন, এবং সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন।
শৈশবেই সংসার ত্যাগ, ভক্তির পথে যাত্রা
কানপুরে জন্ম নেওয়া অনিরুদ্ধ কুমার পাণ্ডে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবনের এর রাধাবল্লভী সম্প্রদায়ে দীক্ষিত হন। তারপর থেকেই তাঁর জীবন উৎসর্গিত রাধা-কৃষ্ণ ভক্তিতে। তাঁর শিক্ষাদান, আচরণ ও প্রেমভক্তির দর্শন তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বৃন্দাবনের রাধা কেলি কুঞ্জ আশ্রম থেকেই তিনি সারা দেশে প্রচার করেন প্রেম, বিনয় ও ভক্তির বার্তা।
রসিক ঐতিহ্যের ধারক প্রেমানন্দ মহারাজ
প্রেমানন্দ মহারাজ রসিক প্রথার অন্যতম বিশিষ্ট সাধক, যেখানে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমই ভক্তির সর্বোচ্চ রূপ। তিনি বলেন, সত্যিকারের ভক্তি মানে হলো — ভালোবাসা, আত্মসমর্পণ, ও সমস্ত ভৌতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি। তাঁর সরল জীবনযাপন, ব্রহ্মচর্য ও আত্মসংযম তাঁকে আজকের দিনে এক বিরল উদাহরণে পরিণত করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আধ্যাত্মিক বিপ্লব
শেষ কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়া-র মাধ্যমে মহারাজের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া হয়েছে। প্রতিদিন তাঁর বক্তব্য, কীর্তন ও সৎসঙ্গ শুনতে লক্ষাধিক মানুষ যুক্ত হন অনলাইনে। অসুস্থ হওয়ার আগেও প্রতিদিন রাত ২টায় পদযাত্রা করতেন বৃন্দাবনে তাঁর সেই পদযাত্রায় অংশ নিতেন হাজার হাজার ভক্ত, শুধু এক ঝলক দেখার আশায়। কিন্তু বর্তমানে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সেই পদযাত্রা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি এখন প্রতিদিনের ডায়ালিসিস নিচ্ছেন, যা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে।
জেনেটিক রোগের সঙ্গে লড়াই
প্রেমানন্দ মহারাজের অসুস্থতার কারণ হলো Polycystic Kidney Disease (PKD) একটি জেনেটিক রোগ, যা ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি এর চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগে সপ্তাহে এক-দু’দিন ডায়ালিসিস হত, এখন তা বেড়ে প্রতিদিনের রুটিন হয়ে উঠেছে।
তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ধর্ম, জাতি ও ভাষার সীমানা ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি এক মুসলিম ভক্ত সুফিয়ান আল্লাহাবাদি, সৌদি আরবের মদিনা শহরে বসে মহারাজের আরোগ্য কামনা করেছেন। হাতে প্রেমানন্দ মহারাজের ছবি নিয়ে তিনি বলেন “মহারাজ একজন মহান মানুষ। আল্লাহ যেন তাঁকে সুস্থ করে তোলেন।”
প্রেমানন্দ মহারাজ আজ শুধু একজন সাধু নন, তিনি আধ্যাত্মিক ঐক্য, মানবতা ও ভালোবাসার প্রতীক। তাঁর শিক্ষা ও জীবনদর্শন আমাদের শেখায় সত্যিকারের শক্তি আসে আত্মসমর্পণ থেকে, আর ভক্তি মানে শুধু ধর্ম নয়, মানবতার পথ। অসংখ্য ভক্ত এখন একসঙ্গে প্রার্থনা করছেন “রাধে রাধে, মহারাজ আবার ফিরে আসুন আমাদের মাঝে, ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন আগের মতোই।”