অসমের জোরহাট জেলার টিটাবর শহর থেকে একটি হৃদয়বিদারক সংবাদ বেরিয়ে এসেছে, যা সমাজের একটি গভীর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। এই ঘটনায় একজন হিন্দু বাঙালি নারী, পূজা রায় নামে পরিচিত, তাঁর স্বামী নূর মহম্মদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই নির্যাতনের কারণ শুধুমাত্র তাঁর ধর্মান্তরে অস্বীকৃতি। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং ‘লাভ জিহাদ’ (Love Jihad) নামক একটি বিতর্কিত বিষয়কে আবারো সামনে এনেছে।
পূজা রায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি নূর মহম্মদের প্রেমের ফাঁদে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। তবে বিয়ের পর তাঁর জীবন রূপান্তরিত হয়ে যায় একটি কঠিন দুঃস্বপ্নে। নূর মহম্মদ তাকে বারবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে চাপ দিতেন। পূজা জানিয়েছেন যে, তাঁকে গরুর মাংস খাওয়ানো এবং বোরকা পরতে বাধ্য করা হত। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এই চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি প্রতিবাদ করলে তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরোপ করা হত। এই নির্যাতনের মধ্যে তিনি গর্ভবতি হন, তবে গর্ভাবস্থায়ও তাঁর উপর অত্যাচার থামেনি। নূর মহম্মদ তাঁর পেটে লাথি মেরে গুরুতর আঘাত করেন, যার ফলে পূজা বর্তমানে জীবন-মৃত্যু সংগ্রামে লড়াই করছেন একটি হাসপাতালে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে, পূজা রায়ের শরীরে গুরুতর চোট লেগেছে, বিশেষ করে তাঁর পেটের অংশে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, এই ধরনের আঘাত গর্ভস্থ শিশু এবং মায়ের জীবনের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এই ঘটনার পর নূর মহম্মদ পলাতক হয়ে গিয়েছেন, এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা আরম্ভ করে দিয়েছে, এবং অনেকে এটিকে ‘লাভ জিহাদ’ নামে অভিহিত একটি সামাজিক সমস্যার অংশ হিসেবে দেখছেন।
‘লাভ জিহাদ’ শব্দটি প্রথমে ভারতের কিছু অঞ্চলে শোনা যায়, যেখানে এটি এমন ঘটনাকে বোঝায় যেখানে একজন ব্যক্তি (বিশেষ করে মুসলিম পুরুষ) প্রেমের আড়ালে অন্য ধর্মের নারীকে আকর্ষণ করে তাদের ধর্মান্তর করানোর চেষ্টা করে। এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন রাজ্যে আইনী পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে, যেমন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ‘লাভ জিহাদ’ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ডের আইন আনা হবে। তবে এই ধরনের আইনের বৈধতা এবং প্রয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্কও চলছে।
পূজা রায়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনা তাঁর পরিবারের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা জানাচ্ছেন যে, পূজা প্রথমে নূর মহম্মদের সঙ্গে সম্পর্ক গোপনে গড়ে তুলেছিলেন, এবং পরিবারের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করেছিলেন। তবে বিয়ের পর তাঁর জীবন একটি নরকের মতো হয়ে ওঠে। এই ধরনের ঘটনা অনেককে সতর্ক করেছে যে, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কে গড়ে তোলার আগে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পটভূমি সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ নূর মহম্মদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি চাইছেন, আবার কেউ কেউ পূজা রায়ের সিদ্ধান্তকেও দায়ী করছেন। তবে এই ধরনের ঘটনা নারীদের নিরাপত্তা ও সমাজের মৌলিক মূল্যবোধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের নির্যাতন শুধু শারীরিক নয়, এটি মানসিকভাবেও একজন মানুষকে ধ্বংস করতে পারে।
A shocking case of Love Jihad and torture coming in from #Jorhat district of #Assam.
In #Titabar town, a Hindu girl named Puja Roy fell in a Love trap and married Nur Muhammad.
After the marriage, Nur Muhammad started to torture her to convert to Islam. Puja alleged that he… pic.twitter.com/eefxmuXhf8
— Hindu Voice (@HinduVoice_in) August 22, 2025
অসমের এই ঘটনার পটভূমিতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ভাগবাটোয়ার সময় নারীদের উপর সাধিত হিংসার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের মধ্যে নারীদের শরীর ও মন হয়ে ওঠে অস্ত্র। আজও এই ধরনের ঘটনা সমাজে একটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। পূজা রায়ের মতো নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও সমাজের দায়িত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
পুলিশ এবার এই ক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে শিক্ষা, সচেতনতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। পূজা রায়ের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং তাঁর পুনরুদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করছেন সারা দেশের মানুষ। এই ঘটনা আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন রাখে—নারী নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় সহনশীলতা কীভাবে একসঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছবে? এটি সময়ের দাবি যে, আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করি।