বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্যাপ্টেনের

বিমান দুর্ঘটনা (plane-crash) বা টেকঅফের সময় বিমানের অস্বাভাবিক আচরণ সবসময়ই আলোচনার বিষয়। প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন এহসান খালিদ এই বিষয়ে কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা দেখে নেওয়া…

plane-crash in Ahmedabad

বিমান দুর্ঘটনা (plane-crash) বা টেকঅফের সময় বিমানের অস্বাভাবিক আচরণ সবসময়ই আলোচনার বিষয়। প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন এহসান খালিদ এই বিষয়ে কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা দেখে নেওয়া যাক। যখন কোনো বিমান টেকঅফ পথে উঠতে গিয়ে হঠাৎ নেমে আসে, তখন এর পিছনে প্রধানত দুটি কারণ থাকে: শক্তির ক্ষয় (লস অফ পাওয়ার) এবং উচ্চতা না পাওয়া (লস অফ লিফট)।

এই দুটি কারণের মধ্যে শক্তির ক্ষতি প্রায়শই উত্তোলনের ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়, তবে উত্তোলনের ক্ষতি অন্যান্য কারণেও ঘটতে পারে। আজ আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যাতে সাধারণ মানুষও বিমান চলাচলের এই জটিল প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারেন।

   

শক্তির ক্ষয় (plane-crash)

বিমানের (plane-crash) শক্তি বলতে আমরা প্রধানত ইঞ্জিনের কথা বোঝাই। ইঞ্জিন হলো বিমানের হৃৎপিণ্ড। টেকঅফের সময় ইঞ্জিনের থ্রাস্ট (অগ্রগতির শক্তি) বিমানকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ডানার উপর দিয়ে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে, যা উত্তোলন বা লিফট তৈরি করে। যদি কোনো কারণে ইঞ্জিনের শক্তি হ্রাস পায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তবে বিমানের গতি কমে যায়। ফলে ডানার উপর বায়ুপ্রবাহ কমে গিয়ে উত্তোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইঞ্জিন বন্ধ (plane-crash) হওয়ার কারণ হতে পারে জ্বালানি সরবরাহে ত্রুটি, যান্ত্রিক ত্রুটি, বা এমনকি পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ (বার্ড স্ট্রাইক)। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালে ইউএস এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ১৫৪৯-এর ঘটনায় পাখির ধাক্কায় উভয় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেই ক্ষেত্রে পাইলটের দক্ষতার কারণে বিমানটি হাডসন নদীতে নিরাপদে অবতরণ করে।

শক্তির ক্ষতি শুধু ইঞ্জিন (plane-crash) বন্ধ হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। টেকঅফের সময় ভুল কনফিগারেশন, যেমন ফ্ল্যাপ বা স্ল্যাট সঠিকভাবে না সেট করা, ইঞ্জিনের দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া, আবহাওয়ার প্রভাব, যেমন প্রচণ্ড গরম বা উচ্চ উচ্চতার রানওয়ে, ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এই সব কারণে শক্তির ক্ষতি হলে বিমান টেকঅফ পথে নেমে আসতে পারে।

উত্তোলনের ক্ষতি 

উত্তোলন বা লিফট (plane-crash) হলো বিমানের ডানার উপর বায়ুপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট শক্তি, যা বিমানকে আকাশে তুলে রাখে। ডানার নকশা এবং বায়ুপ্রবাহের গতি ও কোণ (অ্যাঙ্গল অফ অ্যাটাক) উত্তোলনের মূল নিয়ামক। যদি কোনো কারণে উত্তোলন কমে যায়, তবে বিমান নিচে নেমে আসে, এমনকি ইঞ্জিন সচল থাকলেও।

উচ্চতা না পাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে বিভিন্ন কারণে। প্রথমত, স্টল (Stall) একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। স্টল ঘটে যখন ডানার উপর বায়ুপ্রবাহের কোণ খুব বেশি হয়ে যায়, ফলে বায়ু ডানার সঙ্গে সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। এটি সাধারণত টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় ঘটে, যখন বিমানের গতি কম থাকে। স্টলের ফলে উত্তোলন হঠাৎ কমে, এবং বিমান নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ডানার উপর বরফ জমা বা ক্ষতি উত্তোলন কমাতে পারে। বরফ ডানার আকৃতি পরিবর্তন করে, যা বায়ুপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ১৯৮২ সালে এয়ার ফ্লোরিডার ফ্লাইট ৯০ দুর্ঘটনায় বরফ জমার কারণে উত্তোলন ক্ষতি ঘটেছিল। তৃতীয়ত, ভুল ফ্ল্যাপ সেটিং বা ডানার অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটিও উত্তোলন কমাতে পারে।

Advertisements

এছাড়া, আবহাওয়ার প্রভাব উত্তোলনের ক্ষতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, উইন্ড শিয়ার (Wind Shear) – যেখানে বাতাসের গতি বা দিক হঠাৎ পরিবর্তন হয় – উত্তোলন কমিয়ে দিতে পারে। টেকঅফের সময় এই ধরনের আবহাওয়া বিমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

শক্তি ও উচ্চতার সম্পর্ক

শক্তি ও উচ্চতা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শক্তির ক্ষতি সাধারণত উত্তোলনের ক্ষতি ডেকে আনে, কারণ ইঞ্জিনের (plane-crash) গতি কমে গেলে বিমানের গতিও কমে। কিন্তু উত্তোলনের ক্ষতি সবসময় শক্তির ক্ষতির উপর নির্ভর করে না। উদাহরণস্বরূপ, স্টল বা উইন্ড শিয়ারের কারণে উত্তোলন কমতে পারে, এমনকি ইঞ্জিন পুরোপুরি সচল থাকলেও।

প্রতিরোধে করণীয়

বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তি ও উত্তোলনের ক্ষতি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রথমত, টেকঅফের আগে বিমানের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করা হয়(plane-crash)। ইঞ্জিন, ফ্ল্যাপ, এবং অন্যান্য যান্ত্রিক অংশ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয়। দ্বিতীয়ত, পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, স্টল থেকে পুনরুদ্ধার বা উইন্ড শিয়ারের মোকাবিলায় পাইলটদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, আধুনিক বিমানে স্টল ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং উইন্ড শিয়ার ডিটেকশন সিস্টেম রয়েছে, যা পাইলটদের সময়মতো সতর্ক করে(plane-crash)। এছাড়া, আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। বিমানবন্দরে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ডি-আইসিং সুবিধা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

কিষাণগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই পরিবারের ঘর ছাই

বিমানের টেকঅফ পথে নামার পিছনে শক্তি ও উত্তোলনের ক্ষতি দুটি প্রধান কারণ(plane-crash)। এই দুয়ের মধ্যে জটিল সম্পর্ক রয়েছে, এবং এগুলো প্রতিরোধে প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের সমন্বয় প্রয়োজন। একজন প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি বলতে পারি, বিমান চলাচল একটি অত্যন্ত নিরাপদ ব্যবস্থা, তবে প্রতিটি ফ্লাইটের পিছনে অসংখ্য মানুষের দক্ষতা ও প্রযুক্তির সমন্বয় কাজ করে। সঠিক সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করলে এই ধরনের ঘটনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।