কাঞ্চিপুরম ২৪ নভেম্বর: করুরের মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর প্রথমবার জনসম্মুখে ফিরে এলেন তামিলাগা ভেট্রি কঝগম (TVK) নেতৃত্ব ও তারকা রাজনীতিক বিজয়। রবিবার সাংগুভারচত্রমের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আয়োজিত সম্পূর্ণ ইনডোর সভায় উপস্থিত হন তিনি।
দীর্ঘদিন নীরবতা ভেঙে বিজয়ের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘিরে তামিলনাড়ু জুড়ে তুমুল আগ্রহ তৈরি হলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র দুই হাজার মনোনীত কর্মীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় প্রত্যেকের হাতেই ছিল কিউআর-কোডেড বিশেষ পাস। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় ছিল কঠোর নজরদারি।
অনুপ্রবেশ সিদ্ধান্তে যোগীর সঙ্গে হাত মেলালেন ইমাম প্রধান
করুরে বিজয়ের শেষ বৃহৎ জনসভায় স্ট্যাম্পিডে ৪১ জনের মৃত্যু গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকেই জনসমাবেশ থেকে দূরে ছিলেন TVK নেতার। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেমে থাকলেও, ট্র্যাজেডিতে মৃতদের পরিবারকে একে একে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা জানান, তাঁদের আমন্ত্রণ জানান মামল্লপুরমে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য। বহু মহলে জল্পনা ছিল, করুরের ঘটনার পর বিজয় কি জনসভার ভাষণ থেকে সরে দাঁড়াবেন? রবিবারের সভা সেই জল্পনায় কার্যত পূর্ণবিরতি টানে।
মঞ্চে উঠেই তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বার্তা দেন বিজয়। সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর বক্তৃতার মূল নিশানা ছিল শাসক দল DMK। তিনি অভিযোগ করেন “রাজনীতি মানুষের সেবা করার পথ, মানুষের জীবনের ঝুঁকি বা ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকার মাধ্যম নয়।”
বিজয়ের ভাষণে দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের অঙ্গীকার এবং ‘প্রতিটি পরিবারের জন্য স্বস্তি’ এই তিনটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তিনি বলেন, “দল বড় হলে দেশের উন্নতি হয় না; মানুষের জীবন বড় হলে তবেই সমাজ ও রাজনীতি শক্তিশালী হয়।” কর্মীদের প্রতি নির্দেশ, TVK যেন ‘সংস্কারমুখী ও সহানুভূতিশীল’ রাজনীতির মাধ্যমে শক্তি সংগ্রহ করে।
TVK সূত্রে খবর, ৪ ডিসেম্বর সেলেম থেকে বিজয়ের নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিক সূচনা করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কার্তিকা দীপম উৎসবের কারণে বিশাল জমায়েত সামলানো নিয়ে পুলিশ প্রশাসন আপত্তি জানায়। নিরাপত্তার স্বার্থে দিন পিছিয়ে দিতে বলা হয়।
সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল সেলেম র্যালি স্থগিত রেখে এই ইনডোর “People’s Meeting” আয়োজন করে। বিজয়ের ঘনিষ্ঠদের মত, জনসমাগম কমিয়ে দল চেয়েছিল করুরের ভয়াবহ স্মৃতি থেকে মানুষকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার পথে ফিরিয়ে আনতে।
সভায় অংশ নেওয়া কর্মীদের আবেগও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন পর নেতাকে সামনে পেয়ে তাঁরা নতুন উদ্দীপনা পেয়েছেন। সভা শেষে বাইরে সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়লেও বিজয় কোনো পথসভা বা গণসংযোগে অংশ নেননি যা থেকে স্পষ্ট যে করুরের ঘটনার পর তিনি এখনও প্রচারকে সম্পূর্ণভাবে ওপেন-গ্রাউন্ড ফরম্যাটে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন না। তবু রাজনৈতিক মহলের ধারণা এই সীমিত জনসভাও নির্বাচনী কৌশলের অন্যতম সূচনা।
এদিকে DMK শিবিরে বিজয়ের ধারালো মন্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সেলেব্রিটি ইমেজ ও করুর দুর্ঘটনায় মানবিক অবস্থানের কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। আগামী কয়েক মাসে TVK যদি সংগঠন শক্তিশালী করতে পারে, তবে ২০২৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ের দল নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
করুর ট্র্যাজেডির স্মৃতি যেমন এখনও তাজা, তেমনই টিভিকে সমর্থকদের কাছে বিজয়ের প্রত্যাবর্তন আশার বার্তা। এখন কেবল সময়ই বলবে ইনডোর মিটিং থেকে শুরু হওয়া বিজয়ের নতুন রাজনৈতিক সফর কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
