কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও সাংগঠনিক ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। রবিবার রাজ্যজুড়ে একাধিক জেলায় বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের ঘোষণা করেছে শাসকদল। নয়া দায়িত্ব পেয়েছেন মহিলা, যুব ও শ্রমিক সেল-এর বহু নেতা-নেত্রী। লক্ষ্য একটাই বিজেপির আগ্রাসন ঠেকিয়ে ঘাসফুল শিবিরকে আরও শক্ত করা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, নদিয়া, বীরভূম এবং উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা-সহ একাধিক জায়গায় নতুন ব্লক ও টাউন সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গঠিত হয়েছে নতুন জেলা কমিটিও। তৃণমূলের তরফে জারি হওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশে দল নতুন ব্লক ও টাউন সভাপতি পদে নিয়োগের ঘোষণা করছে।”
সোমবার না মঙ্গলবার… দীপাবলিতে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাংক কবে বন্ধ থাকবে?
দলের এক সিনিয়র নেতা জানান, ভোটের দেড় বছর আগেই সংগঠনকে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষত গ্রামীণ সংগঠন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে দলের অবস্থান আরও মজবুত করাই এই রদবদলের মূল লক্ষ্য।
তৃণমূলের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে সংখ্যালঘু ও গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ বিজেপির দিকে সরে গিয়েছে। সেই ফাঁক পূরণে তৃণমূল চাইছে স্থানীয় স্তরে সক্রিয় নেতৃত্ব গড়ে তুলতে। তাই সংগঠনের সংখ্যালঘু সেলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূলের এই রদবদল একাধিক বার্তা বহন করছে। একদিকে পুরনো ও পরীক্ষিত নেতৃত্বকে বজায় রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে নবীন মুখদেরও জায়গা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তৃণমূলের সংগঠন আরও তরুণ ও গতিশীল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নদিয়ায় জেলা নেতৃত্বে নতুন দায়িত্বে আসছেন কয়েকজন যুব নেতা, যারা দীর্ঘদিন ছাত্র পরিষদ ও যুব তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বীরভূমে, অনুব্রত মণ্ডল অনুপস্থিতিতে সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে বেশ কিছু পুরনো মুখকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। অন্যদিকে বসিরহাটে, যেখানে সম্প্রতি বিজেপি সক্রিয়তা বাড়িয়েছে, সেখানে তৃণমূল নতুন মুখদের সামনে এনেছে যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন বার্তা সরাসরি জনসংযোগের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছে “বুথ-ভিত্তিক শক্তিশালী সংগঠন” তৈরি করতে। এর জন্য প্রত্যেক ব্লক সভাপতি ও টাউন সভাপতিকে নিজস্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বুথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেন, “আমরা এখন আর শুধু নির্বাচনের সময় সংগঠনের কাজ করব না। আগামী এক বছর ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।” সেই নির্দেশ মেনেই এই সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস বলে মনে করছেন তৃণমূলের পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের এই সাংগঠনিক রদবদল আসলে “ঘাসফুলের ঘর গুছিয়ে নেওয়ার” কৌশল। কারণ ২০২৬ সালের ভোটে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামেদের সঙ্গে সরাসরি ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে “ভয়ের প্রতিফলন” বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “তৃণমূল জানে তাদের সংগঠন ভেঙে পড়ছে। তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে এখন নতুন পদবন্টনের নাটক করা হচ্ছে।”