রঘুপুর, ১৪ নভেম্বর: যখন সারা বিহারে এনডিএ-র ঝড় চলছে, ঠিক তখনই রঘুপুর থেকে এল আনন্দের খবর। তেজস্বী যাদব জিতেছেন! প্রথমে ১২ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন, মাঝে মাঝে খবর এসেছিল হারতে চলেছেন, কিন্তু শেষ ৫টা রাউন্ডে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি বিজেপির সতীশ কুমারকে ১৪,৫৩২ ভোটে হারিয়ে দিলেন। এই জয় শুধু একটা আসনের নয়, তেজস্বীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের জয়।
কারণ মাত্র ১৫ দিন আগেও তিনি দিল্লির এক হাসপাতালের আইসিইউ-তে ছিলেন, অক্সিজেন সাপোর্টে।নির্বাচনের ঠিক আগে তেজস্বীর পিঠে গুরুতর চোট লাগে। লম্বার স্পন্ডিলাইটিস এতটাই বেড়ে যায় যে তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। ডাক্তাররা বলেছিলেন, বিশ্রাম না নিলে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তেজস্বী শুনলেন না। হুইলচেয়ারে করে প্রচারে নামলেন।
বিনামূল্যে বছরে 5 লাখ টাকার চিকিৎসা পেতে এখনই করুন এই কাজ
কখনও স্ট্রেচারে শুয়ে, কখনও হুইলচেয়ারে বসে রোড শো। রঘুপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। ভোটারদের সামনে বললেন, “আমি তোমাদের জন্য লড়ছি, তুমি আমাকে ছেড়ো না।” সেই আবেদন কাজে লাগল।গণনার দিন সকাল থেকে ছবিটা ভয়ংকর ছিল। প্রথম ১০টা রাউন্ডে তেজস্বী পিছিয়ে। বিজেপির সতীশ কুমার এগিয়ে। আরজেডি কর্মীরা হতাশ। পাটনার ১০ সার্কুলার রোডে লালু ভবনে মুখ শুকনো।
রাবড়ি দেবী, মিসা ভারতী, তেজ প্রতাপ সবাই টিভির সামনে বসে। কিন্তু বেলা বাড়তেই খবর এল—পোস্টাল ব্যালট আর গ্রামীণ বুথের ভোট গোনা শুরু হয়েছে। তেজস্বী এগোতে শুরু করলেন। দুপুর ২টোর পর থেকে লিড বাড়তে বাড়তে শেষমেশ ১৮ হাজার ছাড়াল।তেজস্বী জয়ের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বললেন, “এটা রঘুপুরের জনতার জয়। আমি আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম শুধু তোমাদের জন্য।
তোমরা আমাকে হারতে দাওনি। এই জয় আমার বাবা-মা, আমার পরিবার আর রঘুপুরের মানুষের।” তাঁর গলা ভারী হয়ে গিয়েছিল। চোখে জল। লালু যাদব ফোন করে বললেন, “বেটা, তুই আমার শের।”রঘুপুরের রাস্তায় আজ উৎসব। ঢাক-ঢোল, আতশবাজি, মিষ্টি বিলি। এক মহিলা ভোটার বললেন, “তেজস্বী হুইলচেয়ারে করে আমাদের বাড়ি এসেছিলেন।
বলেছিলেন, ‘দিদি, আমার পিঠে ব্যথা, কিন্তু তোমাদের জন্য সহ্য করছি।’ আমরা কীভাবে হারাতে দিই?” আরেক যুবক বললেন, “এনডিএ যত টাকা ঢালুক, রঘুপুর তেজস্বীর।”এই জয়ের পিছনে আরজেডি-র পুরো যন্ত্র কাজ করেছে।
লালু যাদব অসুস্থ শরীর নিয়ে দু’টি ভার্চুয়াল সভা করেছিলেন। তেজ প্রতাপ প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। মিসা ভারতীও প্রচারে নেমেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা তেজস্বীর ব্যক্তিগত লড়াই। তিনি দেখিয়ে দিলেন, যুবরাজ শুধু নামেই নয়, কাজেও।


