রাজনীতির‐অঙ্গনে বহু সময়েই নানা ঝলক নিয়ে সামনে এসেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মুখ্য মুখ রাজন্যা হালদার (Rajanya Haldar) । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নাম হয়, চর্চা হয়, জনপ্রিয়তাও বাড়ে। কিন্তু সেই উত্থান স্থায়ী হয়নি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। তখনই রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা বাড়তে থাকে—রাজন্যার ভবিষ্যৎ পথ কোন দিকে? কোন রাজনৈতিক পতাকা সামনে তুলে নিতে পারেন তিনি? এই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্কও কম হয়নি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে নিলম্বনের পরে রাজন্যা কিছুদিন নীরব ছিলেন। তবে নীরবতা মানে যে রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা নয়, তা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট। কয়েক মাস আগেই তিনি ‘দলের দাদা-সংস্কৃতি’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণ, সাংগঠনিক চাপ, এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তাঁর প্রকাশ্যে মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে দৃষ্টি কাড়ে। শাসকদল তখন কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়ে। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই মন্তব্য ছিল রাজন্যার নতুন পথচলার সম্ভাব্য ইঙ্গিত। এক সময় প্রচারের আলোয় রাজন্যা ছিলেন দিন কয়েকের জন্য হলেও, তবুও তা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। সমর্থক এবং বিরোধী—দু’পক্ষের কাছেই তিনি একটি আকর্ষণীয় মুখ হয়ে ওঠেন। তবে এরপর কিছুটা আড়ালে সরে যান তিনি। কিন্তু সোমবারের পোস্ট ফের তাঁর নামকে চর্চার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
সোমবার নিজের সামাজিক মাধ্যমে রাজন্যা একটি ছবি পোস্ট করেন—স্বামী বিবেকানন্দের ছবিতে মালা অর্পণ করছেন তিনি। বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন যেমন রাজনৈতিক নয়, সেই ছবির ক্যাপশন এবং তার নীচের বার্তাই মূল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “আমার বাংলা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র ধার চাই।” আর তার ঠিক নীচে আরও স্পষ্ট বার্তা—“লেটস চেঞ্জ”।
এই দুটি লাইন অনলাইন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিকভাবে সচেতনদের মতে, এই পোস্ট নিছক ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ নয়; বরং ভবিষ্যতে দলবদলের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক আবহ, বিরোধীদের ভূমিকা, এবং তাঁর অতীত অবস্থান সব মিলিয়ে অনেকেই মনে করছেন—এটি তাঁর নতুন সিদ্ধান্তের আগাম সঙ্কেত।
রাজন্যা হালদারের পোস্ট নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একাংশ মনে করছেন, এই পোস্ট সরাসরি কোনও দলবদলের ঘোষণা নয়, কিন্তু তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের মানসিকতা স্পষ্ট করে। নিলম্বনের পর থেকে তিনি যে তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরে আছেন, তা সকলেরই জানা। ফলে তাঁর ‘পরিবর্তন’ বার্তা যে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে—সেটা নিতান্তই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
