HomeBharatPoliticsSIR চালু হতেই উত্তেজনা ছড়াল শাজাহানের সন্দেশখালিতে

SIR চালু হতেই উত্তেজনা ছড়াল শাজাহানের সন্দেশখালিতে

- Advertisement -

সন্দেশখালি: কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশেষ ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR)–এর কাজ চলতেই নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালি। ভোটার তালিকা সংশোধনের এই বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরই এলাকাবাসীর অভিযোগ করকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩৫ নম্বর বুথে বহু বছর ধরে বেশ কিছু বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক যোগসাজশে তাঁরা শুধু দীর্ঘদিন ধরে এখানে থাকা-খাওয়ার সুবিধাই পাননি, পেয়েছেন ভারতের সরকারি নথি এবং একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও।

গ্রামবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, এঁরা অনেকেই আধার, রেশন কার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন সহজেই। এমনকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মতো মহিলাদের জন্য নির্ধারিত ভাতাও নিয়মিত তুলেছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের কথায়, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এই মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ওদের আসল পরিচয় কেউ জানত না। SIR শুরু হতেই সব সামনে আসছে।”

   

দ্রুত SIR সম্পন্ন করে নজর কাড়লেন কেশপুরের BLO

নাম উঠে এসেছে শাহিন গাজির। স্থানীয়দের দাবি, তিনি নিজেকে গ্রামের এক বাসিন্দার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিলেও মূলত বাংলাদেশের নাগরিক। আরও বিস্ফোরক অভিযোগ, গাফুর মোল্লা নামে এক ব্যক্তি প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন তিনি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পার হয়ে এসেছেন এবং এখানে এসে খাদ্য-নিরাপত্তা রেশনের সুবিধা পাচ্ছেন বহু বছর ধরে। একইভাবে মারজিনা বিবি, অনজুরা শেখ এবং হাবিবুল শেখ নামের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা স্থানীয় কিছু পরিবারের ‘আত্মীয়’ সেজে ভারতের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে কিছু সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট পাওয়ার পর। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সন্দেশখালির কয়েকজন বাসিন্দা ক্যামেরার সামনে নিজেদের বাংলাদেশি বলে স্বীকার করছেন—তবে তাঁদের কাছে রয়েছে ভারতের সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি। স্থানীয় মুসলিমরাও ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, “আমরা এখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি। কিন্তু বাইরে থেকে আসা লোকেরা সব সরকারি সুবিধা নিয়ে নিচ্ছে। ওদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত।”

এই অভিযোগ সামনে আসতেই স্মৃতিতে ফিরে এসেছে সেই অস্থির সময়, যখন শাজাহান শেখের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশির সময় মুহূর্তের মধ্যে ভিড় জমিয়ে বাধা দিয়েছিল একদল মানুষ। বিরোধী দলগুলির দাবি ছিল—সে সময় যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশই ছিল বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। যদিও শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সেই অভিযোগ সেই সময় তীব্রভাবে অস্বীকার করেছিল।

বর্তমানে SIR প্রক্রিয়া এগোতে থাকায়, গোটা অঞ্চলজুড়ে পরিচয় যাচাই নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে। বুথভিত্তিক তদন্ত বাড়ানো হয়েছে, এবং প্রশাসনও সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি—শুধু SIR নয়, দীর্ঘমেয়াদে সম্পূর্ণ পরিচয় যাচাইয়ের একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রয়োজন।

সন্দেশখালির পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত হলেও স্পষ্ট ভোটার তালিকা সংশোধনের এই উদ্যোগ কেন্দ্র করে যে বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসছে, তা প্রশাসন ও রাজনীতির দুই দিকেই নতুন প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। বেআইনি অনুপ্রবেশ, পরিচয়পত্র সংগ্রহের দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রশ্রয়—এই সমীকরণ আবারও সামনে আনছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরিচয় সংকটের কঠিন বাস্তবতা। আর ঠিক সেই কারণেই, সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ নজরে রেখেছে রাজ্য-রাজনীতি থেকে প্রশাসন সবাই।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular