নয়াদিল্লি: ভারতের রাজনৈতিক মহলে আরও একবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর নাম নিয়ে ঝড় উঠেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্যসভার সাংসদ নারায়ণাস বাঁধাঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠিতে লিখে অনুরোধ করেছেন যাতে আগামী ২০২৬ সালের ২৬ জানুয়ারি গণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আরএসএস-এর সদস্যদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হোক।
এই চিঠি ১৭ অক্টোবর তারিখে লেখা হয়েছে এবং এতে বাঁধাঙ্গে আরএসএস-এর দেশের প্রতি অবদানকে সম্মান জানানোর কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই অঙ্গভঙ্গি আরএসএস-এর আমাদের মাতৃভূমি ভারতীর প্রতি মূল্যবান অবদানের উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে।”এই অনুরোধটি এসেছে একটা সংবেদনশীল সময়ে, যখন কর্ণাটক রাজ্যে আরএসএস-এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে।
RSS-কে রুট মার্চে আদালতের অনুমোদন, ২ নভেম্বর আয়োজনের নির্দেশ
কর্ণাটকের গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েত রাজমন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খার্গে সম্প্রতি আরএসএস-এর সরকারি স্কুল, কলেজ এবং রাজ্যাধীন মন্দিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ধুমায়মান করেছেন। তিনি আরএসএস-কে অভিযুক্ত করে বলেছেন যে, এই সংগঠন যুবকদের মনকে ‘ধোয়া’ করে সংবিধানবিরোধী দর্শন প্রচার করে।
এর ফলে কর্ণাটক সরকার একজন অফিসারকে স্থগিত করেছে, যাকে আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য দায়ী করা হয়েছে। বিজেপি নেতারা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং খার্গের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জারি করেছেন।
বাঁধাঙ্গের চিঠিতে তিনি বলেছেন, “গণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আরএসএস স্বয়ংসেবকদের আমন্ত্রণ জানানো শুধু তাদের সংগঠনকে সম্মানিত করবে না, বরং দেশের অগ্রগতির জন্য পর্দার আড়ালে কাজ করা অগণিত অজানা বীরদেরও স্বীকৃতি দেবে।” তিনি ঐতিহাসিক উদাহরণও তুলে ধরেছেন।
১৯৬২ সালের ২৬ জানুয়ারি গণতন্ত্র দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার আরএসএস-কে প্যারেডে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল, বিশেষ করে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় তাদের দেশপ্রেমিক ভূমিকার স্বীকৃতিতে। পরবর্তীকালে ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীও একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলোকে উল্লেখ করে বাঁধাঙ্গে বলেছেন যে, আরএসএস সবসময় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
এই অনুরোধের পটভূমিতে আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপনও উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের বিজয়াদশমী থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই উদযাপন চলবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদি আরএসএস-এর শতবর্ষ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশ করেছেন, যা সংগঠনের অবদানকে স্বীকার করে।
আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসবলে বলেছেন, “শত বছরের এই যাত্রায় সংগঠনের বিরোধিতা সত্ত্বেও জনগণের ভালোবাসায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হয়ে উঠেছে।” মোদি নিজে আরএসএস-এর প্রচারক ছিলেন এবং স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সংগঠনের শাখাগুলোকে ‘প্রেরণার পবিত্র স্থান’ বলে অভিহিত করেছেন