সুরাট: বিহার নির্বাচনে NDA-র ঐতিহাসিক জয়ের পর দেশের প্রধান রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য। ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পরিষ্কার বার্তা দেন বিহারের মানুষ জাতপাতের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আর এটা দেশের জন্য অত্যন্ত শুভ লক্ষণ।
তিনি আরও বলেন গত দুই বছর ধরে যাঁরা জামিনে বাইরে থেকে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছিলেন, তাঁদের উদ্দেশেই মোদীর তীর্যক মন্তব্য “এই ‘জামানতী’ নেতারা বিহারজুড়ে জাতপাতের বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মানুষের রায় সেই বিষকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে।”
মাঠ থেকে হাসপাতালে তারকা ক্রিকেটার, দুশ্চিন্তায় ডুবে ভারতীয় শিবির
বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে প্রত্যাশা ছিল ততটাই বেশি, যতটা উত্তেজনা। ভোট-পর্ব শুরু হওয়ার আগেই বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তুলছিলেন, NDA উন্নয়নের নামে সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে। অন্যদিকে NDA দাবি করেছিল বিহার আর পিছিয়ে যেতে চায় না, মানুষ উন্নয়ন, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব এবং দৃঢ় প্রশাসন চায়। ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর স্পষ্ট মানুষ NDA-র সঙ্গেই আছে।
মোদীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিহারের মানুষ এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—জাতপাত নয়, সুযোগ, উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানই তাঁদের প্রধান চাহিদা। তাঁর কথায়, “যারা মনে করেছিল বিহারের মানুষকে জাতপাত দেখিয়ে বিভক্ত করা যাবে, তারা রীতিমতো ভুল প্রমাণিত হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিহারের ভোটের এই ফল শুধু একটি রাজ্যের বিজয় নয়, বরং দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
এই নির্বাচনে NDA যতটা শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে, ততটাই কঠিন অবস্থার মুখে পড়েছে মহাগঠবন্ধন। প্রচারপর্বে জোরশোরে স্লোগান, চোঙা গলায় জাতপাতের সমীকরণ, ভোট-ব্যাংকের বিশ্লেষণ—সবই যেন এক ঝটকায় ভেঙে দিলেন বিহারের ভোটাররা। তারা যেন বলল—বিভাজনের রাজনীতি নয়, দরকার একযোগে এগিয়ে যাওয়ার পথ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদীর এই মন্তব্য শুধু বিজয়ের আবেগ নয়, ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশও বটে। কারণ গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের ময়দানে স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেছে—জাতপাত, ধর্ম, বিভাজন—এসব ইস্যুতে জনগণের ধৈর্য কমছে। তাঁরা বাস্তব উন্নয়ন দেখতে চান। বিহারের এই ফলাফল সেই মনোভাবকেই আরও একবার জোরালো করে তুলেছে।
বিহার দীর্ঘদিন ধরেই জাতপাতভিত্তিক রাজনীতির কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই সমীকরণকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার চাবিকাঠি নিজেদের হাতে রাখত। কিন্তু এবার সেই পুরোনো প্যাটার্ন ভেঙে বিহারের ভোটাররা বলেছে—দায়িত্ববান সরকার চাই, স্থিতিশীল প্রশাসন চাই, উন্নয়ন চাই। PM মোদীর বক্তব্য তাই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ—তিনি স্পষ্ট করে জানান, “এটা দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল সংকেত। বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্যের রাজনীতি জিতেছে।”
এবার NDA-র সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ—মানুষের এই বিশ্বাস ধরে রাখা। উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায় দু’টোকেই সমানভাবে প্রাধান্য দিয়ে এগোতে হবে নতুন সরকারকে। তবে আপাতত বিহার ভোটের রায় NDA-কে দেশের রাজনীতিতে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়েছে, আর মোদীর বক্তব্য সেই আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন।


