ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পা দিতেই সোনার বাজারে যেন নতুন করে আগুন লেগেছে। নতুন মাস শুরু হতেই সোনার দামে এক লাফে বড়সড় বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। বছরের শেষদিকে বিয়ের মরশুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বহু ক্রেতা সোনার দোকানে ভিড় জমালেও, দাম বৃদ্ধির (Gold Price) ফলে অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ। বিশেষত মধ্যবিত্ত পরিবার, যাদের বরের-মেয়ের বিয়ে সামনে, বা উৎসব উপলক্ষে সোনা কেনার পরিকল্পনা ছিল, তাদের বাজেট এখন বেশ চাপে।
সাধারণত ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, ডলারের তুলনায় টাকার ওঠানামা, এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়া—এই তিনটির সংমিশ্রণে সোনার দামে কিছু ওঠানামা দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বরের শুরুতেই দাম বৃদ্ধির হার একটু বেশি বললে ভুল হবে না। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় সেফ হেভেন ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে অনেকেই। ফলে চাহিদা বাড়ার সঙ্গেই স্বর্ণের দামও উপরে উঠছে।
এদিকে বিয়ের তুলকালাম মরশুম। বাঙালির বিয়েতে সোনা ছাড়া ভাবা যায় না। তা সে বরের গলায় চেইন হোক, কনের গলায় হার, কিংবা গয়নার সেট—সবেতেই সোনা অপরিহার্য। কিন্তু দাম একের পর এক বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের স্বস্তি বলাই বাহুল্য কমছে। অনেকেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন—কেউ গয়নার ওজন কমাচ্ছেন, কেউ আবার পুরনো সোনা বদল করে নতুন নিচ্ছেন যাতে অতিরিক্ত খরচ কিছুটা কম হয়।
আজ, ডিসেম্বরের রবিবারে সোনার দাম শহরভেদে বেশ ভালোই পরিবর্তন দেখা গেছে। তার মধ্যে কলকাতার দামই স্বাভাবিকভাবে নজর কাড়ছে। আজ কলকাতায় ১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৩০০ টাকা। এর তুলনায় আরও বেশি খাঁটি সোনা হিসেবে পরিচিত ২৪ ক্যারাট (যা সাধারণত ৯৯৯ বিশুদ্ধতা) তার দাম ১০ গ্রাম ১ লক্ষ ৩০ হাজার ১৫০ টাকা।
এই দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২৪ ক্যারাটের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে যে বাজারে পরিবর্তনের হার বেশি। কারণ বিশুদ্ধ সোনার আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে এর মূল্য সরাসরি যুক্ত। ফলে বৈদেশিক বাজারে দাম বাড়লে বা কমলে তার প্রতিফলন তৎক্ষণাৎ ভারতের বাজারেও দেখা যায়।
সাধারণত বিয়ের আগে-পরেই সোনার চাহিদা বাড়ে। নানা রকম অলঙ্কার কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকেই বিনিয়োগ হিসেবেও সোনা কেনেন। কারণ সোনা দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত। তবে এই সময়টায় দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ কিন্তু তাতে কমেনি। বরং দোকানগুলিতে ক্রেতার ভিড় কমার বদলে আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতারা দামের চাপ সামলাতে বাধ্য হয়ে অনেক সময় হালকা ওজনের গয়না বা স্বর্ণালঙ্কারের ডিজাইনে পরিবর্তন করছেন। কেউ আবার ২২ ক্যারাটের পরিবর্তে ১৮ ক্যারাটের গয়নার দিকে ঝুঁকছেন, কারণ ১৮ ক্যারাটের দামে কিছুটা স্বস্তি থাকে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলতি মাসে সোনার দামে সামান্য ওঠানামা হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ে, অথবা ডলারের তুলনায় টাকা দুর্বল হয়, তাহলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ক্রেতাদের বড় স্বস্তির কথা—এ ধরনের দাম বাড়া-কমা সাধারণত বিয়ের মরশুম শেষে কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে যায়।
