পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও তীক্ষ্ণ ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ শানালেন। সাম্প্রতিক এক রাজনৈতিক সভায় তিনি দাবি করেন, বাংলা দখল করতে গিয়ে বিজেপি নিজ রাজ্য গুজরাটেই হারতে চলেছে। তাঁর বক্তব্যে ছিল তীব্র আগ্রাসন, একই সঙ্গে ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর। মমতা স্পষ্টভাবে বলেন, “আমায় আঘাত করলে গোটা ভারতবর্ষ হেলিয়ে দেব।” রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মন্তব্য ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে রাজ্যস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু এবারের বক্তব্য আরও বেশি সরাসরি, আরও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা দখলের যে হুমকি বিজেপি বারবার দিয়েছে, মমতা তার জবাবে বোঝাতে চাইলেন—তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্বল ভেবেই ভুল করছে কেন্দ্র। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বহু আন্দোলন, বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকের এই রাজনৈতিক চেতনার জায়গায় পৌঁছেছে। তাই বাহিনী নামিয়ে কিংবা কেন্দ্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে বাংলাকে দমিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, “একটা রাজ্যের মানুষকে দমন করতে গেলে তার প্রতিক্রিয়া গোটা দেশে পড়বেই। বাংলাকে যদি আঘাত করো, বাঙালিকে যদি অসম্মান করো, তাহলে তার ঢেউ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।” তাঁর এই বক্তব্যে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাজ্য-রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি নিবিড়ভাবে জড়িত। বাংলা দখলের চেষ্টা যদি বৃদ্ধি পায়, তবে তার ফল ভুগতে হবে অন্যান্য রাজ্যেও—এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এদিন মমতা বিজেপির গুজরাট নির্বাচনের প্রসঙ্গও তোলেন, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বহু বছর ধরে গুজরাট বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সেখানে হারবার সম্ভাবনার কথা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা—এটি নিছক রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে, আবার ভবিষ্যৎ নির্বাচনী সমীকরণ নিয়েও তাঁর বিশেষ পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে। মমতার মতে, মানুষের বিরক্তি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার সংকোচ—এসব কারণে বিজেপির প্রতি তীব্র ক্ষোভ জন্মেছে। তিনি দাবি করেন, সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তনের অপেক্ষায়।
তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যে বারবার উঠে আসে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাতের প্রসঙ্গ। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “সিবিআই, ইডি দিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। Bengal does not bow down.” তাঁর এই কথা রাজ্যের কর্মী-সমর্থকদের কাছে প্রত্যয়ের বার্তা হিসেবে ধরা পড়েছে। সভায় উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা ‘মমতা নামলে রাস্তা জ্বলে’ ধ্বনি তুলে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
এদিনের সভা শুধুই আক্রমণ বা পাল্টা-আক্রমণে সীমাবদ্ধ ছিল না। উন্নয়ন, সাম্যের রাজনীতি এবং গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতিও শোনা যায় তাঁর কণ্ঠে। মমতা জানান, বাংলার মডেল দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি—যেখানে থাকবে মানুষের অধিকার, মানুষের কণ্ঠস্বর এবং সরকারের জবাবদিহিতা।
মমতার এই বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কেবল বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনাই নয়—এটি তাঁর জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষারও ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বহুবার বিরোধী জোট গঠনের প্রয়াসে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর দাবি, ভারতবর্ষকে রক্ষা করতে হলে একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো এক সংস্কৃতি-সচেতন, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে।
