কলকাতা: বাম সরকারের শাসনকালকে হারিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকেই তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। আগামী মাসে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির উত্তাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী মঙ্গলবার নবান্ন থেকে প্রকাশ করতে চলেছেন গত ১৫ বছরের সরকারের কাজের বিস্তারিত রিপোর্ট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের আগে এই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংকেত। একদিকে এটি সাধারণ নাগরিক ও ভোটারদের সামনে সরকারের অর্জন তুলে ধরবে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে তৎপর করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত মমতার সরকার যে প্রকল্প, পরিকল্পনা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে এই রিপোর্টে। গণভিত্তিক প্রকল্প থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন—প্রতিবেদনটি সব দিকই আচ্ছাদন করছে। বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, মহিলা উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নগরপরিষেবা খাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা এতে উল্লেখ থাকবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য খাতের ক্ষেত্রে একাধিক হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর উদ্যোগ, কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও কার্যক্রম—সবই রিপোর্টে আলোকপাত করা হবে। শিক্ষা খাতে স্কুল ও কলেজের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ ও অনুদান, এবং ডিজিটাল শিক্ষার সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য। কৃষিক্ষেত্রে সেচ প্রকল্প, কৃষকের জন্য আর্থিক সহায়তা, বাজারজাতকরণ ও প্রণোদনার বিষয়গুলোও বিবৃত হবে।
নারী উন্নয়ন ও সমাজসেবা খাতেও সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে, যা বিশেষভাবে নজর কাড়বে। যেমন—মহিলা শিক্ষার প্রসার, নারীর জন্য আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানীয় জলের মতো প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের তরফে মনে করা হচ্ছে, ভোটাররা সরকারি কার্যক্রমের সঠিক ছবি দেখতে পারলেই দলের প্রতি আস্থা বাড়বে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ভোটব্যাঙ্কে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রভাব পড়েছে—এটিও রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি সরকারের এই রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। তাদের দাবি, শুধুমাত্র সরকারের সাফল্য তুলে ধরলেই নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ন্যায়সঙ্গত প্রতিফলন হবে না। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটের আগে এই ধরনের বিস্তারিত রিপোর্ট জনগণের কাছে সরকারের চিত্র পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে সহায়ক।
