২৫০+ আসনে ক্ষমতায় ফিরতে তৃণমূলকে মেদ ঝরানোর পরমার্শ কুণালের

kunal-ghosh-tmc-self-criticism-250-seats-2025

কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) ফের একবার দলের ভেতরে আত্মসমালোচনার সুর তুললেন। সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন—মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতিশীল সংগঠন পরিচালনায় বাংলার মানুষ এখনও তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়িত্বে রাখতে প্রস্তুত। তবে এই আস্থাকে আরও শক্ত ভিত্তি দিতে হলে দলের ভেতরে কিছু সংশোধন জরুরি।

Advertisements

কুণাল ঘোষ লিখেছেন, “মানুষ নেত্রীর প্রতি আস্থা রাখছেন, অভিষেকের প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছেন। কিন্তু এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে যদি দলের ভেতরে কিছু নেতা বা কর্মী আসল রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে ঔদ্ধত্যে ভুগতে শুরু করেন, তাহলে বিরক্ত হবেন সাধারণ মানুষও। তাই সময় এসেছে আত্মসমালোচনার।”

“২৫০+ আসন সম্ভব, তবে সতর্ক থাকতে হবে”

কুণাল ঘোষের মতে, তৃণমূলের সরকারের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যে যে পরিমাণ কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে, তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন। পড়ুয়া থেকে প্রবীণ, গৃহবধূ থেকে চাষি—প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত। তাই আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের ২৫০-র বেশি আসন পাওয়া একেবারেই সম্ভব।

তবে তিনি সতর্ক করেছেন, “কিছু জায়গায় স্থানীয় স্তরে মেরামতি দরকার। সঠিক মানুষকে চিনতে হবে। ইগো আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সরিয়ে সবাইকে মানিয়ে চলতে হবে। শাসকের শরীরে জমে ওঠা মেদ বর্জন করতে হবে।”

তৃণমূলের অতীতের লড়াইয়ের স্মৃতি

পোস্টে কুণাল ঘোষ নিজের রাজনৈতিক অতীতও টেনে আনেন। তিনি লেখেন, “সেই কবে আটের দশকে, লালবাজারে সিপির ঘরে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম আমরা কয়েকজন। তখন থানার সমর্থন ছিল না, চাঁদার বড় উৎস ছিল না। কিন্তু রাজনীতি ছিল প্রাণশক্তি, ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আবেগ। মমতাদি জানতেন কীভাবে ঘরে ঘরে মানুষকে বার করে আনতে হয়। তখনও তৃণমূল গড়ে ওঠেনি, কিন্তু ভিতপুজো শুরু হয়ে গিয়েছিল।”

এই স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে কুণাল আসলে বর্তমান তৃণমূলের কাছে বার্তা দিতে চেয়েছেন—ক্ষমতায় থেকেও দল যেন সেই পুরনো প্রাণশক্তি ও নিঃস্বার্থ লড়াইয়ের আবেগ ধরে রাখে।

Advertisements

কৃত্রিম আবহ নয়, চাই অর্গ্যানিক আবেগ

কুণাল ঘোষ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—দলকে কৃত্রিম আবহ থেকে দূরে রাখতে হবে। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অর্গ্যানিক আবেগ, নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের মানসিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি লিখেছেন, “শাসকের জৌলুস নয়, প্রাণশক্তি দিয়ে ভরপুর তৃণমূল চাই। সেই দল থাকলে বিজেপি, সিপিএম কিংবা অন্য বিরোধীরা ঝড়ে উড়ে যাবে।”

রাজনৈতিক তাৎপর্য

রাজনীতির মহলে কুণাল ঘোষের এই বক্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে এটি দলের ভেতরে আত্মসমালোচনার বার্তা বহন করছে, অন্যদিকে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে এক আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা যে, মমতা-অভিষেক জুটি এখনও বাংলার রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য।

তৃণমূলের একাংশ বলছেন, কুণালের এই সতর্কবার্তা দলের ভবিষ্যৎ কৌশলের দিকনির্দেশ করছে। কারণ বর্তমানে রাজনীতিতে শুধু জনপ্রিয় মুখ নয়, সংগঠন ও কর্মীদের শৃঙ্খলাই টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।

কুণাল ঘোষের এই পোস্ট নিঃসন্দেহে তৃণমূলের ভেতরে এবং বাইরে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি একদিকে নেত্রীর কাজের প্রশংসা করেছেন, আবার অন্যদিকে দলের মধ্যে আত্মতুষ্টি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে এটি তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে এক ধরনের সতর্ক সঙ্কেত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।